সুদী প্রতিষ্ঠানের এমডিকে সুদের বিরুদ্ধে দাওয়াত

আজকে একটি বিচিত্র অভিজ্ঞতা হলো। কয়েকশ কোটি টাকার একটি ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ অফিসে গেলাম সুদের বিরুদ্ধে দাওয়াত দিতে। আমি বসে আছি – সামনে এমডি এবং পরিকালকবৃন্দ। এমডি সবার সাথে দেখা করেন না। Moazzem Hossain আমার পূর্ণ একাডেমিক পরিচয় দেওয়াতে রাজি হয়েছেন কথা বলতে।

বিশাল গোল টেবিলে সবার সামনে এমডি আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন , “সুদ বলে কিছু নেই বর্তমান বিশ্বে। সামন্ত্যতন্ত্রে সুদের অস্তিত্ব ছিল যখন মানুষ একশ ঋণ দিয়ে কৃষকের থেকে দুইশ টাকা ফেরত নিতো। এখন আমরা নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বসবাস করছি। এখানে সুদ বলে কিছু নেই। সুদের সংজ্ঞা সবচেয়ে সুন্দর দিয়েছে ইউনুস। শেখ হাসিনা ইউনুসের উপর খেপে অকারণে সুদের ব্লেইম গেইম করছে … ইত্যাদি”

আমি বললাম, “সুদের সঙ্গা কী?”

উনি বললেন, “ঐ যে সামন্ত তন্ত্রে যখন ১০০ টাকা দিয়ে ২০০ ফেরত নিতো। এখন আমরা অন্য অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আছি।”

আমি বললাম,”কোরান তো সার্বজনীন। সুদ অস্তিত্বহীন হয়ে গেছে মানে কোরানের এই বিধান অযৌক্তিক হয়ে গেছে। আমরা কিন্তু প্রতিদিন নামাজ পড়ি। আপনিও পড়েন। সেখানে আমরা কোরান পড়ি কারণ এর বিধান আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক। তাহলে কীভাবে মানতে পারেন সুদ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে? আমি যদি বর্তমান বিশ্বে সামনের জনকে ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে ১২০ টাকা ফেরত নেই, সেইটা কি সুদ হবে?”

টেবিলের সবাই বলল, হবে। আমি বললাম, “আচ্ছা এই পয়েন্টে আমরা একমত হতে পেরেছি যে আমি একজন ব্যক্তিকে ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে ১২০ টাকা ফেরত নিলে তা সুদ।”

সাথে সাথে সবাই হাউকাউ লাগিয়ে দিল এই কথার সাথে আমাদের কি সম্পর্ক? আমরা তো প্রতিষ্ঠান। এখানে কোন একক মালিক নেই। এইটা সরকারের নীতিমালার মধ্যে পড়ে। আমার পাশের জন বলল, “আমি মাদ্রাসার ছাত্র। সামনে উনিও মাদ্রাসার ছাত্র। আমরা কি বুঝি না? আমরা তো মাল কিনতে টাকা দেই এবং ব্যবসার জন্য ঋণ দেই।” আরেকজন বলল, “আপনার বক্তব্য স্পষ্ট নয়।” এমডি বলল, “সারা বিশ্ব চলে কিসের উপর? সৌদি আরব চলে কিসের উপর?”

আমি বললাম, “তাতে আমার কি? সারা দুনিয়া খারাপ হয়ে গেলে মন্দ ভালো হয়ে যাবে ব্যাপারটা তেমন না। সুদের নিশ্চয়ই খারাপ কিছু আছে সেজন্যই আল্লাহ এইটা হারাম করেছে। আমরা দেখি বর্তমানে মুদ্রা এবং সুদ এক হয়ে গেছে। প্রতিটি টাকাই সুদের সাথে জড়িত। ব্যবসায়ে পুঁজি আসে সুদের থেকে। যখন সারা দেশের টাকা আসে সুদের থেকে এবং এই টাকা আরও বেশী চাওয়া হয় তখন ব্যবসা প্রতযোগিতা আর সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না। আমি যদি বলি আপনারা ফুটবল খেলবেন এবং যে সবচেয়ে খারাপ খেলবে তার সম্পত্তি আমার নামে লিখে নিব তাহলে খেলা আর খেলা থাকবে না খেলার মাঠে যুদ্ধ শুরু হবে। একইভাবে যখন ঋণ হয় পুঁজির মাধ্যম তখন ব্যবসায়ীরাও আর সুস্থ প্রতিযোগীটা করে না। যার ভুক্তোভুগী আমরা সবাই। এই পর্যায়ে কি আমরা বলতে পারি না ব্যাংক ঋণ খারাপ?”

তাদের হয়তো আরও কিছু বলার ছিল কিন্তু এমন সময় নামাজের সময় হলো এবং সবাই নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে গেল। নামাজের পরে আর কথা বলল না। কারণ তারা ব্যস্ত, আর সত্যি কথা বলতে আমিও ব্যস্ত ছিলাম।”

আজকে একটা বিষয় বুঝলাম, সুদী প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে নিজেকে নিজের ভুল বোঝাতে হয়। মাদ্রাসার এত ছাত্র এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যে বিষয়টা হতাশাজনক। আপনারা যারা মনে করছেন কোন মতে এখানে একটা চাকরি করে পরে ছেড়ে দিব তারা জানেন না কি পরিমাণ মানসিক দ্বন্দ্বের মধ্যে সময় পার করতে হয় এবং এক সময় আপনি নিজেই বদলে যান, মনে মনে হীনমন্যতায় ভুগেন, অথবা সব ছেড়ে দেন।

আজকে অনুভব করলাম ওনাদের সাথে ঘন ঘন বসতে পারলে আরও কাজ হতো হয়তো। মনে মনে দোয়া করলাম অবশ্যই তাদের হেদায়েতের জন্য তবে সামনে আর কারো সাথে বসছি না। আমাকে লেখালেখি চালাতে হবে। আপনারা বরং বই পড়ে সৈনিক হয়ে যান সুদের বিরুদ্ধে। এই লড়াই আমার একার না।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *