কেন ডলারের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে এবং একই সময় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে?
বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তা হল Balance of Payment সংকট। একটি দেশের আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হলে আমরা বলি দেশটিতে বাণিজ্য ঘাটতি চলছে। কিন্তু বাণিজ্য ঘাটতিই সব কিছু নয়। রেমিট্যান্স, ঋণ, অর্থ পাচার, বৈদেশিক বিনিয়োগ সহ যত প্রকার আন্তর্জাতিক লেনদেন আছে তাদের সকলকে একত্রে বলে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট যা ডলারের দাম বাড়া কমার পিছে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
Balance শব্দটির অর্থ দাঁড়িপাল্লা। আর payment শব্দটির অর্থ হচ্ছে প্রদান। একটি দাঁড়িপাল্লার উভয় পাশ যেমন সমান হয়, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আদান প্রদানের উভয় পাশও সমান হতে হয়। কোন কারণে অর্জন বেশি হলে তা রিজার্ভ হিসেবে সঞ্চিত থাকে আর ব্যয় বেশি হলে কী হয় তা ব্যখ্যা করতে একটি প্রশ্ন করি। আপনার পরিবারের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হলে আপনি কি করেন?
১ সঞ্চয় ভেঙে খরচ করেন। অথবা
২ ঋণ নেন।
ঠিক তেমনি করে বর্তমান বিশ্বের কোন দেশের অর্জন করা বৈদেশিক মুদ্রা অপেক্ষা ব্যয় বেশি হলে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় (ফোরেক্স রিজার্ভ) থেকে খরচ করে অথবা বৈদেশিক ঋণ নেয় (আই এম এফ বা বিদেশি রাষ্ট্র থেকে)
কিন্তু যদি কোন দেশের রিজার্ভ না থাকে বা ইচ্ছা করেই রিজার্ভ খরচ না করে? সেক্ষেত্রে ঋণ নিতে হবে অথবা মুদ্রার মান পড়ে যাবে। ঠিক এই ঘটনাই ঘটছে বাংলাদেশে।
বর্তমানে কেবল বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন সমস্যা শুরু হয়েছে। তার একটি কারণ হচ্ছে জ্বালানি তেল, গ্যাস, ভোজ্য তেল, লোহা, কপার, এলুমিনিয়াম সহ বিভিন্ন প্রকার আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এদিকে খনিজ সম্পদ বিক্রি করা দেশ যেমন সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়ার লালে লাল অবস্থা। তবে বাংলাদেশের জন্যে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আমদানি অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া।
এই মুহূর্তে করণীয় কী? আমার মতে খুব দ্রুত দুইটি জিনিস করা যায়। এক আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে দেওয়া, এবং দুই বিদেশে অর্থ পাঠানোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা। বর্তমানে আরামে থাকতে গিয়ে ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা বাঞ্ছনীয় না। এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে লেবানন।
সবশেষে, ব্যক্তি পর্যায়ে কী করা উচিত? টাকা বিক্রি করে ডলার বা সোনা কিনে ফেলা? উত্তরে আমি বলব এই কাজগুলো করলে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। কারণ আমাদের দেশ ডলার বা সোনা তৈরি করে না তাই এই কাজগুলোর ফলে ডলারের রিজার্ভ শুণ্য হয়ে যাবে এবং টাকার পতন ত্বরান্বিত হবে। এগুলো না করে ব্যক্তি পর্যায়ে এই মুহূর্তে আমাদের উচিত যথা সম্ভব বিদেশি পণ্যের ব্যবহার কমানো। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ হিসেব করে খরচ করা এবং যারা বিদেশে আছেন তাদের জন্য উচিত হবে বাংলাদেশে বেশি বেশি বিনিয়োগ করা।
দেশ ভালো থাকলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। ১৮ কোটি মানুষকে পৃথিবীর কোন দেশ আদর করে নিবে না। তাই দেশের ভালো করেই নিজেকে ভালো থাকতে হবে।