মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা পঞ্জি স্কিম।
পঞ্জি স্কিম হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে নতুন সদস্যদের খাটানো টাকা পুরানো সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। পঞ্জি স্কিমে কোন বিনিয়োগ করা হয় না। কেবল নতুন যুক্ত হওয়া সদস্যদের টাকাতেই প্রতিষ্ঠানের খরচ চালানো হয় এবং পুরানোদের মাঝে লাভ ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। তাই চক্রবৃদ্ধি হারে নতুন সদস্য জোগাড় করতে না পারলে সব তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে।
পঞ্জি স্কিম যেহেতু পতন হতে বাধ্য, নিজেদের পরিচয় ঢাকতে তারা কখনো ট্রেনিং সেন্টার, কখনো বিদেশী পণ্যের একমাত্র ডিসট্রিবিউটর কিংবা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। একজন সাধারন ব্যক্তির পক্ষে পঞ্জি শনাক্ত করা তাই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে কিছু নির্দেশিকা অনুসরণ করলে এদেরকে যাচাই করা যেতে পারে।
১.
খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে কম দামে পণ্য কিনে বাজারে বিক্রি করে। অর্থাৎ, একজন খুচরা ব্যবসায়ী যেই টাকা খরচ করে, সেই পরিমাণ পণ্য হাতে পান। পঞ্জি স্কিম সেই তুলনায় ভিন্ন। এখানে একজন ব্যক্তি কেবল সদস্য পদ কিনে। তারপরে শুরু হয় নতুন সদস্য সংগ্রহের পালা। অর্থাৎ, পঞ্জি স্কিম কোন ব্যবসা নয়। এখানে সবাই পণ্য বিক্রিতে মনোযোগ না দিয়ে কেবল নতুন সদস্য নিয়োগের ধান্দা করে। কিন্তু সদস্যদের থেকে চাঁদা তুলার নাম ব্যবসা না। এভাবে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কোনদিন চলতে পারে না। তাই এমন প্রতিষ্ঠানে কিছু পণ্য সাজানো থাকলে বা ট্রেনিং প্রদান করলেও তা একটি ধোঁকা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
২
পঞ্জি স্কিম কর্তৃপক্ষ অনেক সময় দাবী করে তারা ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আপনাকে নিযুক্ত করতে যাচ্ছেন এবং এর বিনিময়ে আপনাকে এন্ট্রি ফি দিতে হচ্ছে। কিন্তু হকার পর্যায়ে কেউ ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করে না।
৩ কতটি পণ্যের বিপরীতে কত জন ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করতে হয় তার একটি ভারসাম্য আছে। এমন যদি হয় ছাত্রর তুলনায় এজেন্ট বেশি কিংবা পণ্যের তুলনায় সেল এজেন্ট অত্যধিক বেশি তাহলে স্কিমটি পঞ্জি হওয়ার খুব সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি ঢাকতে অনেক সময় বলা হয়, “মাল গোডাউনে আছে, আগে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করে পরে পণ্য বিক্রি করা হবে।” বা এখন এজেন্ট বেশি পরে ছাত্র ও ট্রেইনার আসবে ইত্যাদি। এমন প্রতারণাপূর্ণ ফাঁদকে সতর্ক ভাবেই এড়িয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে আপনাকে যদি বলে নতুন এজেন্ট / ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ করতে। কারণ এজেন্টের দায়িত্ব এজেন্ট নিয়োগ করা না। তার দায়িত্ব মাল বিক্রি করা কিংবা ছাত্র জোগাড় করা। কেবলমাত্র পঞ্জিতে এক এজেন্ট আরেক এজেন্টকে নিয়োগ করতে হন্যে হয়ে ঘুরে।
৩
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানিগুলো সদস্য জোগাড় করে দেবার বিনিময়ে আপনাকে এবং আপনার উপরের সবাইকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু মোট বিক্রি বাড়ানোর নাম ব্যবসা, সদস্য সংগ্রহ করা না। তাই একজন ব্যক্তি যদি নতুন সদস্য এনে দিলে কমিশন দেয়ার কথা বলে (গ্রাহক সংখ্যা বা বিক্রির সাথে সম্পর্ক ব্যাতিত) তাহলে বুঝে নিতে হবে সমস্যা আছে।
৪
পঞ্জি স্কিমের সদস্যরা মুখে পণ্য বিক্রি বা বিনিয়োগের কথা বললেও কাজে কর্মে তারা কেবল নতুন সদস্য সংগ্রহে মনযোগী হয়ে থাকে। নিজের সেলস রিপোর্ট উন্নত করার চেয়ে বরং সদস্য সংগ্রহ রিপোর্ট নিয়ে চিন্তা করে।
তাই আপনাকে যদি বলা হয় কোন প্রজেক্টে বিনিয়োগের (বা পণ্য বিক্রির) পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করলে ‘প্রতি ধাপে’ বাড়তি লাভ পাবেন সেক্ষেত্রে বুঝে নিবেন এখানে সমস্যা আছে।
৫
আপনি যদি আয়ের উৎস জানতে চেয়ে পঞ্জি স্কিমের সকল কাগজ পত্র দেখতে চান, কোম্পানি কখনও আপনাকে সেই হিসেব দেখাতে পারবে না। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারীর এই হিসেব দেখার অধিকার আছে।
MLM বা পঞ্জি স্কিম এই কাজ কখনো করবে না। কারণ, MLM এ নতুন আয়কৃত সম্পদ উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করা হয় না।
সবমিলিয়ে এমএলএম কোন ব্যবসা না বরং এটি এক ধরণের প্রতারণা যা গাণিতিক ভাবেই ব্যর্থ হতে বাধ্য। একেবারে প্রথম দিকে যারা পঞ্জি স্কিমে যুক্ত হয় তারা কিছু টাকা লাভ করতে পারে; বাদবাকি সকলে এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মোহাইমিন পাটোয়ারী