ব্যাংক ব্যবস্থার ধোঁকা

ব্যাংক ব্যাবস্থা বা সুদের কারবার কিভাবে সমাজে বৈষম্য, দারিদ্র এবং বেকারাত্ব সৃষ্টি করে তা একেবারে সাবলীল বাক্যে সরল একটি উদারহণ দিয়ে ব্যাখ্যা করছি। (মাত্র ১৫ বাক্যে!)

মনে করেন পৃথিবীর সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন খুব ছোট্ট একটি গ্রামে কেবল দশ জন মানুষ বসবাস করে এবং তারা কড়ি দিয়ে বেচা কেনা করে। সমগ্র গ্রামে মোট ১,০০০ কড়ি আছে এবং এর মাধ্যমেই তারা সকল  লেনদেন সম্পন্ন করে। বড় দেখে একটি লোহার সিন্দুক কিনে আমি গ্রামটিতে গিয়ে ক্ষুদ্র আকারের একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করলাম। সিন্দুকে কড়ি রাখা নিরাপদ ভেবে এবং আমি বিশ্বস্ত মানুষ দেখে সবাই আমার ব্যাংকে নাম লিখিয়ে (একাউন্ট খুলে) কড়ি জমা রাখতে লাগলো। এইভাবে মোট ৪০০ কড়ি আমার সিন্দুকে জমা পড়্ল। সকল অলস টাকা সিন্দুকে জমা না রেখে আমি তিনশ কড়ি দুই জন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়ে, বাকি একশ কড়ি গ্রাহকদের জন্যে সিন্দুকে রেখে দিলাম। সুদের হার সামান্য, একশ কড়িতে বছরে মাত্র দশ কড়ি।

এখন হিসেব কষে দেখেন, বিশ বছর পরে সুদে আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে নয়শ কড়ি। কিন্তু সিন্দুকে একশ কড়ি থাকায় সম্পূর্ণ গ্রামে মোট কড়ির পরিমাণই নয়শ। সব কড়ি দুই জন ব্যাবসায়ির নিকট আসা সম্ভব নয়, কারণ সেই ক্ষেত্রে ব্যাবসার কোন গ্রাহক থাকবে না। অর্থাৎ, ব্যবসায়িদের একজনকে বা দুই জনকেই দেউলিয়া হতে হবেই। দেউলিয়া হলে ব্যাবসায়ির সব সম্পদ আমার হাতে চলে আসবে। এইভাবে গ্রামে দুইজন নিঃস্ব মানুষের জন্ম হবে এবং আরেকজন ধনী ও প্রভাবশালী ব্যাক্তির জন্ম হবে। অথচ আমার হাতে প্রথমে লোহার সিন্দুক ছাড়া আর কিছুই ছিল না, এবং ব্যাবসায়ির ঋণ খেলাপি এড়ানোরও কোন রাস্তা ছিল না। এখন এই গল্পটাতে গ্রামের জায়গায় দেশ আর আমার জায়গায় ব্যাংককে কল্পনা করুন, আধুনিক অর্থনীতি আরও অনেক অনেক জটিল এবং বিস্তৃত হলেও মোটা দাগে বাস্তবতা এমনই। (বিস্তারিত জানার জন্য প্রকাশিত হবার পরে আমার বই পড়ার আমন্ত্রণ রইল)

-মোহাইমিন পাটোয়ারী

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *