কিভাবে মূল্যস্ফীতি এড়িয়ে কর্জে হাসানা দিবেন

মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে মালের বদলে মাল বিনিময় করা। অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর ফলে সময়ের সাথে টাকা তার মূল্যমান হারাচ্ছে। কিন্তু পণ্য সময়ের সাথে মূল্যমান হারায় না।

আমরা যদি কাগুজে মুদ্রা ব্যতিত অন্য কোন মূল্যবান বস্তু দ্বারা লেনদেন করতে পারি তাহলে আর মূল্যস্ফীতির ঝামেলায় পড়তে হবে না। এমন অনেক বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তবে সবাই যেহেতু সোনা পছন্দ করে, আমরা আমাদের আলোচনা সোনার মুদ্রা দিয়েই শুরু করি।

এই পদ্ধতিতে আমরা সোনার মূল্যে ঋণ দিব এবং নিব। সোনা ব্যবহার করার একটি সুবিধা হচ্ছে টাকার মূল্যমান হারিয়ে গেলেও সঞ্চয়কারীর কোন সমস্যা হবে না। মূল্যস্ফীতি হয় মুলত অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে। সোনা যেহেতু কেউ তৈরি করতে পারে না এই মুদ্রার মূল্যমান হারাবার কোন ভয় নেই।

তবে এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রকৃত সোনার বার ব্যবহার করতে হবে। কেবল মাত্র সোনার মূল্যমান ধরে অদৃশ্য লেনদেন করা সম্ভব নয়। রাসুল সা. বলেছেন, “তোমাদের কাছে যা নেই তা বিক্রয় করো না।” তাই আপনি আজকে ১ ভরি সোনার সমপরিমাণ টাকা ধার দিয়ে দশ বছর পরে সেই সময়ের ১ ভরির সোনার সমপরিমাণ টাকা ফেরত নিবেন এমন করা সম্ভব না।

তাই আমাদের সোনার বার বা বিস্কিট ব্যবহার করতে হবে। অলংকার ব্যবহার না করে সোনার বার বা বিস্কিট ব্যবহার করার গুরুত্ব হচ্ছে এর বিক্রয় মূল্য এবং ক্রয় মূল্যের পার্থক্য কম, অলংকারের মত এত বেশি হের ফের হয় না। তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেনের সময় সোনার বার ব্যবহার করলেই সকল ঝামেলা মিটে যায়। উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক কিভাবে।

আজাদ দুই লক্ষ টাকা তিন বছরের জন্য সঞ্চয় করতে চায়। সে এই টাকা ব্যাংকে না রেখে কর্জে হাসানা হিসেবে দিতে চায় এবং তিন বছর পরে টাকা হাতে ফেরত পেতে চায়। কিন্তু বর্তমানে সে খুব চিন্তিত যে এই টাকা তিন বছরের মধ্যে অনেক মূল্যমান হারিয়ে ফেলবে এবং ব্যাংকে না রাখলে সে ঠকে যাবে। তারপরেও সে সাহস করে দুই লক্ষ টাকা কর্জে হাসানা প্রতিষ্ঠানকে ধার দিতে যায়। মনে করি, কর্জে হাসানা প্রতিষ্ঠানটির নাম মুক্তি। আজাদ টাকা জমা দিতে আসলে মুক্তির কর্মকর্তা বললেন আমরা তো টাকা ধার নেই না, আমরা সোনা ধার নেই। আপনি গিয়ে বাজার থেকে কাঁচা সোনার দুইটি বার নিয়ে আসুন, আমরা তিন বছর পরে আমরা আপনাকে দুই বার সোনা ফেরত দিব। আজাদ সেই মোতাবেক কাজ করল। ২০২০ সালে আজাদ ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ২ ভরি সোনা কিনে দিল। তিন বছর পর ২০২৩ সালে আজাদ এসে তার সোনা ফেরত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে দিল এবং তৎকালীন মূল্য ফেরত পেল। শতভাগ ইসলাম সম্মত বৈধ পদ্ধতি।

এবার আসা যাক কর্জে হাসানা প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে। আজাদ যাবার পরপরই রুনা এবং নার্গিস নামের দুইজন ভদ্র মহিলা আসলেন ঋণ নিতে, একজন হটাত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, চিকিৎসার জন্য ১ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আরেকজনের স্বামী অকালে মারা গিয়েছেন, তাই হঠাৎ করে অভাবে পড়ে গেছেন। এই মুহূর্তে কিছু টাকার প্রয়োজন। পরবর্তীতে তিনি একটি কাজ খুঁজে টাকা আয় করে ঋণ পরিশোধ করে দিবেন।

সবকিছু শুনে মুক্তির ঋণ অফিসার মতিন সাহেব বললেন, “আপনাদের প্রয়োজনীয়তা এবং ফেরত দেবার যোগ্যতা যাচাই করে আমরা ঋণ দিতে প্রস্তুত। তবে আমরা টাকায় ঋণ দেই না। আমারা আপনাকে সোনার বার দিচ্ছি। আপনি দুই বছর পরে আমাকে সোনার বার ফেরত দিবেন।” রুনা ও নার্গিস উভয়েই শুনে বলল, “ঠিক আছে। আমরা রাজি।”

এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি এড়িয়ে কর্জে হাসানা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি। প্রতিষ্ঠান চাইলে নিজে সোনার বিস্কিট কেনা বেচা করে গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি করতে পারে। সোনার মূল্য উঠানামা করে সত্য। কিন্তু যেহেতু সময়ের সাথে সোনার মূল্য গড়পড়তা বৃদ্ধি পায়, সেহেতু সব মিলিয়ে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা যেতে পারে ইনশাল্লাহ।

মোহাইমিন পাটোয়ারী

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *