এবারে আমেরিকা থেকে মা ভারী দুইটি লোহার কড়াই আনলেন। আমি তো অবাক, বিমানে করে এমন ভারী বস্তু কেউ আনে নাকি। বললেন, নন স্টিক প্যানে নাকি স্বাস্থ ঝুঁকি আছে। সেজন্য লোহার কড়াই ব্যবহার করা ভালো। তাই লোহার কড়াই এনেছেন আমেরিকা থেকে। আমি অবাক হয়ে বললাম, নিউ মার্কেটে গেলেই তো লোহার ফ্রাই প্যান পাওয়া যাবে। এর জন্য আমেরিকা থেকে ভার বহন করতে হয় নাকি। কিন্তু তিনি বললেন, “দেশে এগুলো পাই না।”
মনে মনে ভাবলাম, “সর্বনাশ, আমাদের দেশে তো আগে সব ঠিকই ছিল। তোরা বিদেশীরা এসে খারাপ জিনিস ধরিয়ে দিলি এখন আবার আমাদের কাছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া জিনিস বিক্রি করিস।”
আমি বিদেশে পড়াশোনাকালে দেখেছি তারা কি পরিমাণ গুরুত্ব দেয় প্রাকৃতিক জিনিসের উপর। অনেক বেশী দামে বিক্রি হয় প্রাকৃতিক পণ্য যেমন প্রাকৃতিক সাবান, কলা গাছের আঁশ থেকে তৈরি কাপড়, চটের ব্যাগ ইত্যাদি। অছচ প্রাকৃতিক গা মাজুনি (ধুন্দলের খোল), সাবান, পাটের শাড়ি, চটের ব্যাগ লাউয়ের খোলের বোতল, বেতের তৈরি ঝুড়ি, নারিকেলের তেল এগুলো সব আমাদের দেশেরই ছিল। সেই জায়গায় এখন আছে প্লাস্টিক বোতল, জালি, পলিথিনের ব্যাগ, সিনথেটিক কাপড়ের শাড়ি, সোপ, কন্ডিশনার সহ পরিবেশের ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল। গ্রাম গঞ্জে সিটি কর্পোরেশনের মতন ময়লার গাড়ি নেই কিন্তু সেখানেও প্লাটিকের পণ্য় দেদারচে বিক্রি হচ্ছে, ডায়পার, ন্যাপকিন, প্লাস্টিকের ঝুড়ি, পাটি, হাত পাখা সহ সব রকমের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল পণ্য। কিন্তু এগুলো কোথায় ফেলবে সেইটার কোন সমাধান নেই। মানুষ আর কি করবে, কেউ খেতে, কেউ খালে ময়লা ফেলে। পুকুরের পানি দিনকে দিন ময়লা থেকে ময়লাতর হবে, ফলন কমতে পারে এক পর্যায়ে প্রশাসন জেগে উঠবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেই সমাজে প্লাস্টিক ছাড়াই জীবন সুন্দর যাচ্ছিল এবং বর্জ্য নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা করা হয় নাই সেখানে কেন এগুলো দেওয়া হলো? আর উত্তম জিনিস তো আমাদের দেশেই ছিল। সেগুলো ব্যবহার করতে কি এমন অসুবিধা ছিল? কেউ কি উত্তরটি দিবেন? যদি দিতে না পারেন এই ব্যাপারে একটু হলেও ভূমিকা রাখতে পারে এমন কোন ব্যক্তির কাছে লেখাটা পৌঁছে দিবেন? তাও যদি না পারেন নিজে কি একটু সচেতন হবেন এবং অন্যকে সচেতন করবেন?