আমার বইগুলো যেন আমার চোখের মণি

প্রথম যখন আমি বই লেখার সিদ্ধান্ত নেই তখন অনেকে প্রশ্ন করেছিল, “বই যদি বিক্রি না হয়?” সেক্ষেত্রে কি করবে?

আমি বলতাম, “বই লেখার উদ্দেশ্য তিনটি

১ – এই বই পড়ার আগের এবং পরে ব্যক্তি এক থাকবে না। আমার বই পড়ার পরে একজন ব্যক্তির চিন্তার জগতে এবং জ্ঞানের জগতে পরিবর্তন আসতে হবে।

২ – বই পড়ে মনে হবে এতোদিন কেন এই বইটি পড়লাম না।

৩ – এই বইটি পড়ে যেন একজন পাঠক অনুভব করে, সবার জন্য বইটি পড়া উচিত।

এই তিনটি উদ্দেশ্য যদি একজন ব্যক্তির জীবনেও সত্য হয় তাতেও আমি মনে করবো আমার কষ্ট সার্থক।”

এই কথা শুনে কেউ কেউ আশাবাদী হতো, কিন্তু কেউ কেউ পালটা প্রশ্ন করতো, “বই যদি একেবারেই বিক্রি না হয়?”

এই প্রশ্নটি বেশ ভয়ংকর ছিল। আমি কল্পনা করতে পারতাম না এমন পরিস্থিতি। শুধু মনে করতাম বই বিক্রি হতেই হবেই। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে, বাসে দাঁড়িয়ে প্রেসেন্টেশন দিব। তারপরেও যেন মানুষ বইটি পড়ে। কারণ আমি জানি আমার বই কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত আমার আবেগ আগের মতোই আছে। বইগুলোর জন্য এমন কিছু নেই যে করি না।

এবারের অটোগ্রাফ অফারে আমার ব্যস্ততা দেখে প্রকাশনীর একাধিক ব্যক্তি আলাদাভাবে মন্তব্য করলেন যে, “আপনি নিজের বইগুলোর জন্য এতো পরিশ্রম করেন যে দেখে অবাক হই।” তখন আমি বললাম এটা আর কি? এবারে একুশে বইমেলাতে ব্যানার ডিজাইন করে, নিজের টাকায় প্রিন্ট করে, হাতুড়ি পেরেক নিয়ে মেলার বিভিন্ন জায়গায় ঠুকেছি। এমনকি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে গেছি একদিন। সে হাতুড়ি পেরেক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং আমি চাইলে একটি একটি করে দিচ্ছিল। গেল বছরের ইসলামি বই মেলায় তো কাঁধে করে বই নিয়ে দিয়ে এসেছি। মনে স্বপ্ন ছিল – তারপরেও যেন মানুষ বইগুলো পড়ে।

আলহামদুলিল্লাহ, পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। বলা যায় যেই তিন উদ্দেশ্য নিয়ে বই লিখা শুরু করেছিলাম তা সত্য হয়েছে। আশা করি আজ না হোক, কাল না হোক – বহু বছর পরে হলেও একদিন বইগুলো সমাজে দৃশ্যত পরিবর্তন আনবে ইনশাল্লাহ।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *