দেশীয় খেলা যে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা ছোট থাকতে টাকা ছাড়া খেলেছি। কিন্তু এখন খেলার নামে শিশুদের থেকেও টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন এপ ডাউনলোড করা, কয়েন কেনা, লেভেল আপ করা সহ প্রিমিয়াম ভার্সন কেনায় শিশুদেরকে প্রচুর ব্যয় করতে হয়। ফ্রি গেমে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য কিনতে উৎসাহিত করা হয়। আর ছোট বেলা থেকেই ভোগবাদী মানসিকতা তৈরি হয়। সেই তুলনায় আমাদের দেশীয় খেলা গুলো কত সামাজিক! কানামাছি, বৌছি, খো খো, দৌড়, সাঁতার, গোল্লাছুট খেলতে টাকা লাগে না, সামাজিকতার চর্চা হয় এবং প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক নিবিড় হয়। কেবল ঘরে বসে একাকীত্বে ভুগতে হয় না, সেজন্য চাইল্ড সাইকলোজিস্টের কাছেও যেতে হয় না।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে দেশীয় খেলা গুলো শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ঘরে বসে গেম খেলে জিমে ভর্তি হওয়া কোন সুস্থ সমাজের লক্ষণ হতে পারে না। জিম একে তো ব্যয়বহুল তার উপর এই পণ্যগুলো বিদেশ থেকে আনতে হয়। বিদেশি গাড়িতে চেপে জিমে গিয়ে আবার বিদেশী ট্রেড মিলেই দৌড়াই আমারা। এর অর্থ কী?
আরও দুঃখজনক ব্যাপার কি জানেন? যারা আজ বাহিরে খেলতে অভ্যস্ত তারা দেশী খেলা ছেড়ে বিদেশী খেলা (ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি) খেলাতে অভ্যস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাতে কি সমস্যা? সমস্যা হচ্ছে এই খেলা গুলোর টিভিতে দেখানো হয় যা শতভাগ নেশা উদ্রেককারী। অনেক সময় আমরা যত না খেলি তার চেয়ে বেশী খেলা দেখি। আর এই খেলার ফাঁকে ফাঁকে পুঁজিবাদী পণ্য, অশ্লীলতা ও নোংরা সংস্কৃতি বিস্তার করতে থাকে। তার চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই খেলার আসরগুলো যেভাবে সাজানো হয় তা জুয়ার মত। নিছক খেলা না। এই জুয়া এখন বিভিন্ন বেটিং এপের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায়ে ছড়িয়ে গেছে।
সবশেষে বিদেশি গেমের বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড দেখাতে শিশুরা বিদেশী পণ্য ও পুঁজিবাদী সংস্কৃতির প্রতি এক ধরণের টান অনুভব করে। ফলে বাংলাদেশের মত দেশে আমদানী নির্ভরশীলতা, মেধা পাচার ও অর্থনীতিতে সংকট তীব্র হয়। তারপরেও সরকার দেশি খেলার বিস্তারে খরচ না করে হাজার হাজার কোটি টাকা ও হাজার হাজার বিঘা জমি বিদেশী খেলার উন্নয়নে ব্যয় করছে। আমাদের করের টাকার কী নিদারূণ অপচয়।
এই অস্বাস্থ্যকর ও অসামাজিক মোবাইল ও কম্পিউটার গেম ও বিদেশি খেলার পিছে টাকা নষ্ট না করে দেশীয় খেলাগুলোকে ফিরিয়ে এনে কম খরুচে ও সুস্থ জীবন যাপন করা নিয়ে রাষ্ট্রের কাজ করা উচিত।