প্রশ্নের জবাব

কিছুদিন আগে আমার একটি  লেখা বেশ আলোচনা, সমালোচনা এবং সন্দেহের উদ্রেক করে। আজকে এই ব্যাপারে কিছু কথা বলছি। লেখাটি সংক্ষেপে এমন,

“যদি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে কেবল মাত্র ১০০ কড়িই থাকে এবং একজন ব্যাক্তি ১০ কড়ি দিয়ে সুদের ব্যাবসা শুরু করে শতকরা দশ টাকা সুদে, ১০ বছরের জন্যে কড়ি গুলা ঋণ দিলে দশ বছর শেষে তা হবে ২০ কড়ি। এই বিশ কড়ি পুনরায় ঋণ দিলে বিশ বছর পরে তা হবে ৪০ কড়ি (বাকি সকল দ্বীপবাসীর হাতে থাকবে ৬০ কড়ি)। এইভাবে সকল কড়ি একজনের হাতে আসতে থাকবে অথবা জনগণ ক্রমান্বয়ে দেউলিয়া হতে থাকবে এবং সে সম্পদশালী হতে থাকবে।”

গল্পটি নির্ভেজাল হলেও সমালোচনার ঝড় উঠে যখন আমি বলি আধুনিক ব্যাংকিং ব্যাবস্থা ঠিক এরই ছদ্মরূপ। অভিযোগ উঠে যে কড়ির পরিমাণ স্থির ধরেছি কিন্তু টাকার পরিমাণ স্থির নয়। তাছাড়া টাকা চাইলেই ছাপানো যায় বা পরিমাণে বৃদ্ধি করা যায়।

সর্বোপরি, একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের সাথে আধুনিক রাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যাবস্থার তুলনা করা যেতে পারে না। সবার প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে

কড়ির পরিমাণ সসীম কিন্তু টাকার পরিমাণ কি অসীম?

-না। তবে টাকার পরিমাণ স্থির নয়। বৃদ্ধি বা হ্রাস করা যেতে পারে।

ঠিক। কিন্তু আপনি চাইলেই কি আপনার জন্যে টাকা ছাপাতে পারেন?

-না।

চাইলে কি আমি টাকা ছাপাতে পারি?

-না।

বাংলাদেশ সরকার কি টাকা ছাপাতে পারে?

-নিশ্চিত না।

সরকারের ব্যায়ভার কেমনে বহন করে?

– কর আর শুল্ক গ্রহণের মাধ্যমে।

সঠিক। আর যদি কর ও শুল্ক আয়ের তুলনায় রাষ্ট্রীয় ব্যয় বেশি হয় তাহলে?

-সরকার ঋণ গ্রহণ করে।

তাহলে টাকাটা ছাপায় কে? টাকার পিঠে কি লেখা থাকে?

-কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঠিক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার জন্যে টাকা ছাপায়? টাকা ছাপিয়ে কার হাতে দেয়?

– জানি না।

-কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি এই টাকা কাউকে দান করে?

-না।

-তাহলে কি করে?

-ঋণ দেয়।

-কাকে?

-অন্যান্য ব্যাংক কে (তারা পুনরায় গ্রাহককে ঋণ দেয়) অথবা বাংলাদেশ সরকারকে।

-আচ্ছা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাউকে টাকা দান করে না কেবল মাত্র ঋণ প্রদান করে। এখন যদি কেউ যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ না করে নতুন টাকা কি বাজারে আসা সম্ভব?

-না

-কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ঋণের বিপরীতে কি সুদ থাকে?

-অবশ্যই থাকে।

-কিন্তু ১০০ টাকা বাজারে ছেড়ে যদি কেউ ১১০ টাকা সুদ দাবী করে নতুন ১০ টাকা কোথা থেকে আসবে।

-বাজারে যেই বর্তমান টাকা আছে তা থেকে।

কিন্তু বাজারের বর্তমান টাকা তো ব্যাংকের থেকেই ছাড়া। অর্থাৎ তাদের বিপরীতেও সুদের দাবী আছে। কেমনে সামনে আগাবে?

-কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ক্রমান্বয়ে অধিক টাকা ছাড়তে হবে যেন পুরান ১০০ টাকার উপর ১০ টাকা সুদে আসার আগেই নতুন টাকা বাজারে আসে।

-কিন্তু আরও বেশি ঋণ না নিলে কি নতুন টাকা আসবে?

-না

অর্থাৎ একটি দেশে জনগনের ঋণের বোঝা এবং সেই সাথে সুদ কেবল বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং এক পর্যায়ে জনগণ গণহারে দেউলিয়া হতে থাকবে। যাকে বলে credit cycle. এভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *