একটি মৃত্যু ও অসংখ্য রাজনৈতিক বাস্তবতা

দেলোয়ার হোসেন সাইদী মারা গেল কিন্তু সোস্যাল মিডিয়ার কিছু পোস্ট ছাড়া আর কোথাও যেন কোন টু শব্দ নেই। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে অনেক গুলো কথা মনে পড়ে গেল।

যুদ্ধাপরাধী মামলার বিচার যখন হচ্ছিল তখনকার কথা, তার পরবর্তী নির্বাচনের কথা, লাগাতার হরতাল অবরোধ ও পুলিশি নির্যাতন কথা। সেই সময় জামাত ও বিএনপি তাদের সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে পরাজিত হয়েছিল। একটি দল বা দেশ যখন নিজের সব শক্তি খাটিয়ে পরাজিত হয় তখন তার কোন অবস্থান থাকে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঠিক তাই হয়েছে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সবাই এখন পরাজিত শক্তি – বিএনপি থেকে জামাত, শাপলা থেকে পল্টন সব। তাই দেশে কোন হরতাল হয় না, অবরোধ হয় না, আন্দোলন হয় না, প্রশাসন ও মিডিয়া একদলীয়। তাই সবাই কেবল আবেগ পুঁজি করে বসে আছে।

এক সময় এর চেয়েও খারাপ অবস্থা ছিল। এমন একটা সময় গেছে যখন কেউ কোন কথাই বলতেও পারতো না। এখন যেহেতু সবাই পরাজিত হয়ে গেছে, তাই অনলাইন আর ওয়াজের মাঠে কথা বলার কিছুটা স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তা নিয়েই আমাদের উল্লাসের শেষ নেই। কিন্তু এগুলো করে লাভ হয় না আসলে। কেবলমাত্র নিজের মনকে মিথ্যা স্বান্তনা দিয়ে ক্ষ্মতাশীলদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করা ব্যতীত। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সমাধান কী?

অনেকেই বলবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বদলানো সমাধান। হয়তো এটি একটি ছোট সমধান কিন্তু রাজনীতির ময়দানে নেতৃত্ব বদলানোর পরে কিছুই রাতারাতি বদলে যাবে না। রাজনীতিকদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা আছে কতটুকু?

মূলত আমরা প্রত্যেকেই পরাজিত শক্তির অংশ। আমাদের মধ্য থেকে যেই ব্যক্তিই নেতা হোক না কেন, সমীকরণের ফলাফল একই থাকবে।

এখন আমরা কি করতে পারি?

আমার মতে প্রথমে নিজেকে এবং তারপরবর্তীতে অন্যকে গড়ার কাজ করতে হবে। আমাদের উচিত প্রকৃত শিক্ষা অর্জন ও সুচিন্তার প্রসার ঘটানো। শিক্ষার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমাদের শেখা উচিত অর্থনীতি কীভাবে কাজ করে, রাজনীতি কীভাবে কাজ করে, কীভাবে বিশ্ব চলছে, প্রযুক্তিগত উৎকর্য কীভাবে অর্জন করতে হয়। আগে নিজেকে সৎ হতে হবে এবং অসৎকে বদলাতে হবে। তারপরেই আমরা মুক্ত হতে পারবো।

জাতিগতভাবে যখন কেউ তৈরি হতে পারে তখন তাদের মধ্য থেকে যেই ব্যক্তিই নেতা হয় না কেন, সে তাদের পক্ষেই কাজ করে। আর জাতিগতভাবে যারা অসৎ, মূর্খ এবং সুযোগ সন্ধানী, তাদের নেতা চাইলেও ভালো কিছু করতে পারে না।

সময় কি আসে নাই আবেগের ছড়াছড়ি ও নেতা বদলের আন্দোলন বাদ দিয়ে নিজেদেরকে গড়ে তোলার পিছে সময় ব্যয় করার? 

মোহাইমিন পাটোয়ারী
১৬ আগস্ট ২০২৩

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *