সুদকে নিয়ে দার্শনিকদের বক্তব্য

সুদকে নিয়ে ক্রিটিকালি লেখি বলে অনেকেই আমাকে বলেন ইসলামি অর্থনীতিবীদ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমি একজন ফাইনান্সিয়াল বিশ্লেষক (CFA passed) এবং পড়াশোনায় শতভাগ পশ্চিমা অর্থনীতির ছাত্র ( আই বি এ, নরওয়ে স্কুল অফ ইকনোমিক্স এবং জার্মানির মানহাইম বিশ্ববিদ্যালয়)।

প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিজীবী মহলে সুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নতুন কিছু নয়। এই দলে সব ধর্মের ও সময়ের দার্শনিকদেরই পাওয়া যাবে।

উদাহরণ হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর (খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৭-খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৭) কথাই চিন্তা করুন। তার ‘Laws’ নামক গ্রন্থে তিনি সুদের নিন্দা করেছেন। তিনি সুদকে মানবতাবিরোধী, অন্যায়, জুলুম এবং কৃত্রিম ব্যবসা বলে তীব্রভাবে  বিরোধিতা করেছেন।

অপর গ্রীক বিজ্ঞানী ও দার্শনীক এ্যারিস্টোটলের অবস্থান ছিল এমনই। তার মতে, অর্থ ধার দিয়ে তার ওপর সুদ আদায়ের মাধ্যমে সম্পদ পুঞ্জীভূত করার জন্য অর্থের ব্যবহার করা অনুচিত। তিনি সুদকে কৃত্রিম মুনাফা আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘অন্যান্য পণ্যের ন্যায় অর্থ ক্রয়-বিক্রয় করা একটি কৃত্রিম ও জালিয়াতি ব্যবসা।’ তিনি তার ‘Politics’ শীর্ষক ঐতিহাসিক গ্রন্থে লিখেছেন-

“সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে ঘৃণিত হচ্ছে সুদ যা নিজ থেকে এবং অর্থের স্বাভাবিক ও প্রকৃতিগত উদ্দেশ্য থেকেও অর্থ উপার্জন করে। কারণ, অর্থের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে কাজ করা, সুদের মাধ্যমে বৃদ্ধি পাওয়া নয়; সম্পদ অর্জনের পদ্ধতিসমূহের মধ্যে এই পদ্ধতি হচ্ছে সবচেয়ে অস্বাভাবিক।”

এ্যারিস্টোটল, পলিটিক্স, পৃষ্ঠা ১২৫৮

ইওরোপের মধ্যযুগের দার্শনিকদের মাঝে সুদের বিরুদ্ধে অবস্থানই ছিল মূলধারা। এই ব্যাপারে থমাস একুইনাসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক যুগেও এই ধারা চলমান। বিখ্যাত দার্শনিক এবং সমাজতন্ত্রের জনক কার্ল মারক্স ছিলেন সুদের বিরোধী। তার মতে সুদ টাকার থেকে টাকা উৎপাদন করে যা অনৈতিক এবং বৈষম্য সৃষ্টিকারী।

বর্তমানে জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিল স্টিল এবং পল গ্রিগনের নাম উল্লেখযোগ্য।

তার কারণ কেবল মাত্র ইসলামের বিশ্বাসের জায়গা থেকে সুদ খারাপ নয়।হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, নাস্তিক সবার জন্যই সুদ খারাপ। তাই বুদ্ধি বিবেকের জায়গা থেকেই সকল মানুষের জন্য সুদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কর্তব্য।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *