একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। অনেক দিন আগে আমাদের এলাকার নবাব অত্যন্ত বিপদে পড়েন। সেই বছর বন্যা ও খরায় সকলের ধান নষ্ট হয়ে যায়, ফলে খাজনাও উঠে একেবারেই কম। এদিকে খাজনার পরিমাণ কম হলেও, চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটিশদের যে রাজস্ব দেয়ার কথা ছিল তা কোন পরিবর্তন করা হয়নি। নাবাব চিন্তায় পড়ে বিলেতে পড়ুয়া পাটোয়ারী মশাইয়ের কাছে চিঠি পাঠালেন,
“পাটোয়ারী মশাই,
অত্যন্ত বিপদে পড়িয়া আপনার স্মরণাপন্ন হইয়াছি। সামনের মাসেই রাজস্ব পরিশোধ করিতে হইবে, কিন্তু এই বছর খাজনা আদায় হইয়াছে নিতান্তই অল্প। সময়মত রাজস্ব আদায় করিতে না পারিলে সমস্ত জমি ব্রিটিশরা নিলামে তুলিয়া বিক্রয় করিইয়া দিবে। পরিবার পরিজন লইয়া কোথায় আশ্রয় লইব ভাবিয়া তার কুল করিতে পারছি না। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মূল্যবান পরামর্শ দ্বারা আমাদের উপকৃত করিতেন, সর্বদা আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকিতাম।
ধন্যবাদান্তে,
নবাব ফয়জুন্নেসা”
পাটোয়ারী মশাই দ্রুত চিঠির উত্তর দিলেন
“জনাবা ফয়জুন্নেসা,
আমার সালাম লইবেন। আপনার দুর্দিনের সংবাদ পাইয়া আমি যার পর নাই ব্যথিত। এই ব্যাপারে আপনি কোন দুশ্চিন্তা করিবেন না। আজই সঞ্চয়পত্র ইস্যু করিবার অনুমতি দিন। আমি আপনার কোষাধ্যক্ষ বৈরাম বেগের নিকট বিস্তারিত আলোচনা পূর্বক আরেকটি পত্র প্রেরণ করেছি। আপনার সাফল্যে কামনা করি।
শুভেচ্ছান্তে
খন্দকার পাটোয়ারী”
চিঠি পেয়ে বৈরাম বেগ চারদিকে খবর পাঠালেন, যেই ব্যক্তি নবাব কে ১,০০০ মোহর কর্জ দিবে, নবাব তাকে তিন বছর পরে সম্পূর্ণ ১,০০০ মোহর ফেরত দিবেন এবং প্রতি বছর ১০ মোহর করে উপঢৌকন দিবেন।
যাদের হাতে মুদ্রা সঞ্চিত ছিল তারা মনে মনে ভাবতে লাগলো, নবাব তো আমাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবেন না। আর ঘরে টাকা রাখা অনিরাপদ, তার চেয়ে বরং নবাবের কাছে টাকা জমা থাকুক, তিন বছর পরে এই টাকা তুলে আনব, এর মাঝে বছর বছর আয়ও হচ্ছে।
পর দিনই নবাব বাড়িতে ৩০ জন সোনার মোহর নিয়ে হাজির। তাদের সবাইকে বৈরাম বেগ নিজ হাতে স্বাক্ষর করে কাগজে লিখে দিলেন, তোমাদের এই পরিমাণ মোহর নবাবের কোষাগারে সঞ্চিত আছে এবং তিন বছর পরে এই দিনে দলিল পত্র জমা দিলে মোহর ফেরত পাবে। এই দলিলের পত্রই হচ্ছে সঞ্চয় পত্র। বর্তমান যুগে বিভিন্ন দেশের সরকার এভাবেই সঞ্চয় পত্র ইস্যু করে জরুরি ব্যয়ভার গ্রহণ করতে ঋণ নিয়ে থাকেন।
এদিকে সঞ্চয়পত্র কেনার এক বছরের মাথায় যদু মিয়ার ঘর ঝড়ে ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তিন বছরের আগে তো মোহর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাই যদু মিয়া গ্রামের ব্যাপারি কৃষ্ণর কাছে গেল। গিয়ে বলল কৃষ্ণ, আমার সঞ্চয় পত্র কিনে নাও, সময় মত তোমাকে নবাব মোহর ফেরত দিবেন আর বছর ছর তো সুদ আসছেই। কৃষ্ণ শুনে খুশি মনে সঞ্চয়পত্র কিনে নিল ১,০০০ মোহরে বিনিময়ে। এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে তাদের সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিক্রয় করতে লাগলো। এদিকে নবাব ফয়জুন্নেসার দেখাদেখি অন্যান্য নবাবেরাও বন্ড বা সঞ্চয়পত্র ইস্যু করতে লাগলো। ফলে যে যার পছন্দ মত ক্রয় বিক্রয় করা শুরু করল। ধীরে ধীরে বেচা কেনার সুবিধার্তে একসময় শেয়ার বাজারের মতো একটি বাজার ব্যবস্থার মত গড়ে উঠল। বিংশ শতাব্দীতে এসে যার নাম হয়ে গেল বন্ড মার্কেট।