আমাদের গ্রামের রতন ভাই শাড়ি তৈরির একটি কারখানা দেয়। ভালোই যাচ্ছিল সব। কিন্তু হটাত করে শুরু হয় বিপত্তি। রং করার নতুন কিছু মেশিন বাজারে আসে যা তিনি না কিনলে অন্য ব্যবসায়িদের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেন না, কিন্তু রং করার যন্ত্রপাতি কেনার মত টাকা তাঁর হাতে নেই।
ব্যাংকে গিয়ে সুদের হার শুনে তিনি ফেরত আসলেন। কিভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকবেন, কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তার পড়ে গেলেন। নিরুপায় হয়ে পাশের গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী রুপাইয়ের কাছে গেলেন। রুপাই বলল চিন্তা করো না তুমিও শেয়ার ছাড়।
কিন্তু কত দামে শেয়ার ছাড়তে হবে, কতটি শেয়ার ছাড়তে হবে, লাভের কত অংশ দিতে হবে তা কিভাবে বুঝা সম্ভব? এই সমস্যা নিরসনে তারা দুজনে মিলে গ্রামের পড়াশোনা করা ব্যক্তি চৌধুরী সাহেবের কাছে গেলেন। বিভিন্ন হিসেব করে চৌধুরী সাহেব বললেন প্রতি শেয়ারে লাভের ১ শতাংশ দিবে এমন ২০ টি শেয়ার ছাড়। আর শেয়ার প্রতি দাম রাখবে নগদ এক হাজার টাকা। তারপরে, শাড়ির কারখানার একটি মুল্যায়ন রিপোর্ট তৈরি করে চৌধুরী সাহেব সাক্ষর করে দিলেন। অর্থাৎ, চৌধুরী সাহেব হচ্ছেন বর্তমান যুগের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক।
এবার দুই বন্ধু মিলে সবার কাছে প্রচার করতে লাগলো আগামী বাংলা মাসের এক তারিখে ২০ টি শেয়ার বিক্রয় করা হবে। যে যে নিতে আগ্রহী কিনতে আবেদন জমা দাও। সবাই খোঁজ খবর নিতে লাগলো। রতন ভালো ব্যবসায়ী তার সাথে ব্যবসায় শরিক হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
অনেকে দর দাম না বুঝেই কাগজ জমা দিল। কেউ কেউ আবার সব খোঁজ খবর নিয়ে চৌধুরী সাহেবের রিপোর্ট দেখে কিনতে আগ্রহী হল। শেয়ার কেনার অতি উৎসাহ দেখে রতন ভাই বললেন একজন ব্যক্তি দুইয়ের অধিক আবেদন দিতে পারবে না। তারপরেও ২০ টি শেয়ারের বিপরীতে মোট ৫০ টি আবেদন জমা পড়ল। রতন ভাই লটারি করে ২০ জন ভাগ্যবান নির্নয় করে শেয়ার বিক্রি করলেন। এই হল আই পি ও।
এদিকে যাদের লটারিতে নাম উঠল না তারা কিনতে মরিয়া হয়ে দাম বাড়িয়ে লটারি জয়ীদের থেকে পুনরায় কিনে নিলেন। এভাবে আই পি ওর পরের দিনই দাম বেড়ে তুঙ্গে। একে বলে আই পি ও সফল হয়েছে।
ওদিকে পাশের বাজারের মানিক ভাই ভাবলো আমারওতো বিস্কুটের বেকারি আছে। আমিও একটু শেয়ার ছাড়ি, নতুন নতুন ওভেন কিনি। তিনি ৫০ টি শেয়ার ছাড়লেন। প্রতি শেয়ারের মূল্য ১,০০০ টাকা এবং শেয়ার প্রতি লাভ্যাংশ আসবে ১ শতাংশ। তারপরে মানিক ভাই জোর প্রচারণা চালালেন। কিন্তু সবাই হিসেব করে দেখলো এই প্রক্রিয়ায় বেকারির বর্তমান মূল্য আসে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এত দাম হবে না মানিকের ব্যবসার। সর্বোচ্চ দাম হবে ৪৫ হাজার টাকা। অনেকেই তাই শেয়ার কেনায় আগ্রহ দেখাল না। এভাবে দেখা গেল ৫০ শেয়ারের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৪০ শেয়ারের। মানিক ভাইয়ের মাথায় হাত। আই পি ওর পরের দিনই শেয়ারের দাম কমে গেল। একে বলে আইপিও ব্যার্থ হলো।