নিজের একটি বই থাকুক তা হয়তো আমরা সবাই-ই চাই। তাই আজকে চলুন আমরা জেনে নিন বই প্রকাশ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য –
- প্রকাশনী
নতুন কোন বই লিখতে গেলে সবার আগে যেই প্রশ্নটি আমাদের মনে ঘুরপাক খায়, তা হচ্ছে বইটি কি কেউ ছাপাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা হাতের নাগালের মধ্যে থাকা প্রকাশনীগুলোর সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু বাস্তবে আপনি যেই প্রকাশনীর কাছেই যান না কেন, তারা সবাই একই কথা বলবে, “আপনার পাণ্ডুলিপিটা দেখান।” অর্থাৎ, বই এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হলেই তা যাচাই বাছাই করে দেখা হবে। তার আগে আপনি কত আপন কিংবা আপনি কত জ্ঞানী মানুষ এই বিষয়গুলো আমলে আসবে না।
- পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করব কিভাবে?
বই এর জগতের একটি অন্যতম মজার বিষয় হচ্ছে লেখকের স্বাধীনতা। বই একটি ছবির মত, কেমন হবে বা না হবে তার কোন নির্দিষ্ট ছক নেই। বই এবং এসাইনমেন্ট লেখা কখনও এক রকম না। এসাইমেন্টের ক্ষেত্রে আপনি আপনার বিজ্ঞ শিক্ষকের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করেন ছক বাঁধা লেখায়। অপরপক্ষে পাঠকরা আপনার থেকে শিখতে চায়, আনন্দ পেতে চায়, সেই চিন্তা থেকেই লেখালেখি করতে হবে।
এক্ষেত্রে আমি যা করি তা হচ্ছে সব প্রাসঙ্গিক চিন্তা একসাথে লিস্ট করি। তারপরে সেগুলো কিছুটা গুছিয়ে আগ পিছ করে একটি সূচি তৈরি করি। তারপরে লেখা শুরু করি এবং কিছু কেস স্টাডি সংগ্রহ করি। তারপরে পুনরায় পুরো লেখা কয়েকবার পড়ে আগ-পিছ, কাট-ছাট করে সম্পাদকের কাছে প্রেরণ করি। সম্পাদনা শেষে আরেকবার দেখে প্রকাশনীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
- বই প্রকাশ করা –
বই প্রকাশ করার ব্যাপারে একটি প্রচলিত ভূল ধারণা রয়েছে যে, বই ছাপাতে অনেক টাকা লাগে। কথাটা মোটেও সত্য না। আপনার পাণ্ডুলিপি পছন্দ হলে প্রকাশনী নিজেই ছাপাবে, এমনকি টাকা দিয়ে তা কিনেও নিতে চাইবে। তবে এক্ষেত্রে নবীন লেখকরা একটু বৈষম্যের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাণ্ডুলিপির গুরুত্ব বোঝাতে হয়। এই সমস্যাটা বিশ্বব্যাপী। হ্যারি পটারের জে কে রওলিংস তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এমনকি অনেকেই এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ছোট প্রকাশনী গুলোর কাছে গিয়ে বলেন, “আমি নিজে খরচ দিচ্ছি, তারপরেও আপনারা আমার বইটি ছাপান।” অর্থাৎ, ছাপানো নিয়ে লেখকের চিন্তা করার কোন কারণ নেই, খুব আগ্রহী হয়ে থাকলে, কিছু টাকা দিয়েও বই প্রকাশ করতে পারেন।
- বই বিক্রিত হওয়া –
এই ধাপটা আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কঠিন। একটি বই বাজারে ভালো চলবে কিনা তা আগের থেকে লেখকের পক্ষে বলা মুশকিল। আর নতুন লেখকদের জন্য তা বোঝা মনে হয় অসম্ভব।
এমন অনেক হয়েছে যে শত কোটি টাকার মালিক বা বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তি কিংবা বহু বন্ধুর অধিকারী একজন ব্যক্তি কোন বই লিখেছেন, কিন্তু ৫০০ কপিও বিক্রি হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আল্লাহ কবুল না করলে একটি বই বড় হয় না। তবে লেখকদের জন্য একটি পরামর্শ হচ্ছে পাঠক শ্রেণি তৈরি করা। আপনার লেখা যদি অনেকে আগের থেকেই পড়তে পছন্দ করে তারা আপনার বই স্বেছায় কিনে নিবে। এতটুকু পর্যন্ত হয়তো আপনার হাতে আছে। কিন্তু পরবর্তীততে সবার কাছে এই লেখা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা বোঝা মুশকিল। অভিজ্ঞ প্রকাশকও অনেক ক্ষেত্রে ভুল প্রমাণিত হন।
এই সকল চিন্তা না করে আমার মতে কাজ শুরু করে দেওয়া উচিত। আপনি কখনও চেষ্টা না করলে জানবেন না আপনার দ্বারা কি সম্ভব বা কি অসম্ভব। তাছাড়া বিক্রয়ে সফল হওয়াটাই সব কিছু না।
- লেখকের সম্মানি –
সাধারণত বই বিক্রয়ের ১০ শতাংশ টাকা লেখক সম্মানি হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। অনেক লেখক সামান্য টাকায় স্বত্ব বিক্রয় করে দেয়, কারণ বেশিরভাগ প্রকাশনীই নবীন লেখদের টাকা দিতে চায় না।
সত্যি কথা বলতে টাকা দেওয়াতো দূরের কথা বরং নিজেদের কাজটাও লেখকদের দিয়ে সেরে ফেলতে চান। এই দিক থেকে ঐতিহ্য অনেক ভালো অবস্থানে আছে, তারা লেখকদের যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়।
সাধারণত, লেখকরা বই প্রকাশ হওয়ার পরের বছর টাকা পায়। অর্থাৎ, আপনি ২০২২ সালে বই প্রকাশ করলে টাকা পাবেন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে (যদি প্রকাশক দেয় এবং সত্য কথা বলে)। সত্যি কথা বলতে এই জগতে আসলে টাকা পয়সার মায়া ত্যাগ করেই আসতে হবে। তা না হলে অপনাকে হতাশার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। একজন নবীন লেখককে কি পরিমাণ দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা লিখতে গেলে আরেকটি বই হয়ে যাবে।
সবশেষে, আমি বলবো আপনি যদি লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন অবশ্যই বই লিখবেন। অর্থ কড়ি জীবনের সবকিছু না। বই আপনার একটা পরিচয় এবং সৃজনশীল স্বত্বার প্রকাশ। লেখালেখি করার আনন্দ একবার পেয়ে বসলে আপনার কাছে এই কাজটিই সবচেয়ে ভালো লাগবে এবং এর বিনিময়ে তেমন কিছু আশাও করবেন না। যা পাবেন তার সবটাই মনে হবে পুরস্কার।
ধন্যবাদান্তে –
মোহাইমিন পাটোয়ারী