নিজের জ্ঞান অর্জনের রাস্তা নিজেকেই তৈরি করতে হয়

আমার লেখা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করছে কিন্তু ক্লাসে যাওয়ার কিছুদিন পরে হতাশ হয়ে মেসেজ করছে, “পরীক্ষা, লেকচার এবং সিলেবাস খুবই বিরক্তিকর।

প্রচুর মুখস্ত করতে হয় এবং ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে ক্যারিয়ারেই ফোকাস করা যায় না।

বাংলা একাডেমিক বইও নাই যে পড়বো। ইংরেজি ঠিক মত না বুঝার কারণে ইংরেজি বই পড়েও ভালো বোঝা যাচ্ছে না। এখন করণীয় কী?”

প্রথমত জানলে খুশি হবেন যে এটি একটি জাতীয় সমস্যা। কেবল আপনি একা ভুক্তোভূগী না। বাংলা ভাষায় ভালো একাডেমিক বই নেই দেখেই আমার বই গুলো এতো চলছে। কেবল অর্থনীতি না, সকল বিষয়ের সকল জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা এই সমস্যায় ভুগছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও একই অবস্থা; এমনকি আইবিএতেও। সেজন্য মাঝে মাঝে মনে করে চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে সারাদিন কেবল একাডেমিক বই লেখি। দেশের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কষ্ট হয়। যাই হোক, আমি নিজে কী করেছিলাম তা বলি।

আমি প্রথমে উইকিপিডিয়া আর্টিকেল দিয়ে শুরু করি। সেখানে একটা না বুঝলে আরেকটা ক্লিক করতে করতে শর্ট সেল, ফিউচার, অপশন, মনেটারি থিওরি ইত্যাদির সাথে পরিচিত হই। কিন্তু এভাবে ভালো বুঝতে পারি না। তারপরে ভিডিও দেখা শুরু করি এবং নিজেকে আরও মূর্খ অনুভব করা শুরু করি।

এর সাথে সাথে আমি নিয়মিত পত্রিকায় অর্থনীতি বিষয়ক খবর পড়তাম। বিশেষ করে ডেইলি স্টার এবং ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস। বিদেশী ম্যাগাজিন পেলেও পড়তাম পাঠাগারে।

সত্যি কথা বলতে ইন্টার থেকেই এই পড়ার অভ্যাস ছিল। তাই বলা যায় মনের আনন্দের বেসিক জিনিসগুলো শিখে যাই। কিন্তু এভাবে জটিল বিষয়গুলো বোঝা যেতো না। তবে প্রতিদিন জ্ঞানের পরিসর বাড়তো।

এমন অবস্থায় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে দুইটা জিনিস। এক – খান একাডেমির ভিডিও এবং দুই – একাডেমিক বই।

সাধারণত একাডেমিক বই পড়তে আমার একঘেয়ে লাগতো কিন্তু অর্থনীতির বিদেশী একাডেমিক বই গুলো অসাধারন। আমি দুইটা বই বিশেষ পছন্দ করেছি। ১ – ম্যানকিউ এবং ২ – বেন বার্নানকি (পরবর্তীতে তিনি ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান হন)।

তখন কোন বিদেশী বই পেলেই হাতে নিয়ে পড়ে দেখতাম। কিছু না বুঝলে জিদ চেপে বসতো। তাই আরও পড়া শুরু করলাম। কেমব্রিজের এ লেভেলের বই থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে আরও জটিলতোর ফাইন্যান্সের বইয়ের দিকে ঝোঁক বাড়তে থাকলো। দেখা গেল কোন বই না বুঝলে এর আগে কী কী বই পড়তে হবে তা টার্গেট করে নতুন নতুন বই খুঁজে পড়া শুরু করতাম।

টানা দুই সপ্তাহে তা শেষ করে আবার ধরতাম। এবারো না বুঝলে আরেকটা সহজ বই পড়তাম। তারপরে আবার ধরতাম। এভাবে চলতে থাকতো।

পড়তে পড়তে অন্যান্য কাজ থেকে সরে আসা শুরু করলাম। একসময় টিউশন করাতাম। সেইটা বাদ দিলাম। এক কালে ক্লাসের পরে আড্ডা দিতাম, সেইটা কমে আসতে থাকলো। এক কালে নিয়মিত ক্লাস করতাম। সেটাও মাঝে মাঝে ফাঁকি দিতাম পড়াতে বেশি মনোযোগ থাকলে।

একদিন পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ভাবলাম কিছু খেয়ে এসে আবার পড়তে বসি। এমন সময় অপূর্ব সুন্দর এক রমনী নিয়ে আমার বন্ধু আসছিল। আমাকে দেখে মিষ্টি হাসি দিলো তারা। আমি পাংশু মুখে দাঁড়িয়ে ভাবলাম তারা কত সুখী কিন্তু আমি মাথা ঝিম ঝিম করে ফেলছি।

এমন আরও কত কিছু ত্যাগ করে যে জ্ঞানের নেশায় বুদ হয়ে ছিলাম তার কোন হিসেব নেই। যেদিন থেকে পড়াশোনার আনন্দ পেয়েছি সেদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার জন্য পড়া ছেড়ে দিয়েছি প্রায়। তারপরেও ভালোই করেছি পছন্দের বিষয়ে। কেবল বিরক্তিকর কিছু মুখস্তভিত্তিক বিষয় এবং তেল খাওয়া শিক্ষকের শিক্ষিকার জন্য গ্রেড একটু পিছিয়ে যায়। অনেক বঞ্চনার শিকার হয়েছি। কিন্তু আমার কোন আফসোস নেই।

আমাকে যদি আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আমি আবার একই কাজ করতে চাই। কারণ সেটাই সঠিক।

আপনারা যারা শিখতে চান এই রাস্তা ধরুন। নিজেই নিজের শিক্ষক হয়ে যান। বই, পত্রিকা, ভিডিও এবং নিজের চিন্তা থেকে শিখুন। কেউ আপনার জন্য কিছু করবে না। নিজের চেষ্টাতেই নিজেকে সামনে আগাতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *