পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষ নতুন নতুন বস্তু উদ্ভাবন করে আসছে। এমনই একটি চমকপ্রদ উদ্ভাবন হল এই কাগুজে মুদ্রার জন্ম। একসময় টাকা বলতে বোঝাতো সোনা, রুপা, তামা ইত্যাদি। তারও আগে কড়ি, ট্যালি স্টিক (কাঠের মুদ্রা), লবণ ইত্যাদির মুদ্রা হিসেবে প্রচলন ছিল। তবে মধ্যযুগের পরবর্তীতে এসে ইওরোপে বহুল ব্যাবহৃত একটি মুদ্রা হয়ে যায় সোনা।
সোনার একটি সমস্যা হচ্ছে এটি ঘরে সংগ্রহ করে রাখা অনিরাপদ। এই সমস্যা এড়াতে তখনকার যুগের মানুষ স্বর্ণকারের সিন্দুকে সোনা জমা দিয়ে আসতো। বর্তমানে আমরা যেমন ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রিসিড নিয়ে বাড়ি ফিরি, তেমনি সেই যুগের মানুষ সিন্দুকে স্বর্ণ জমা দিয়ে তার বিপরীতে একটি কাগজ নিয়ে বাড়ি ফিরত। কাগজে লেখা থাকবে যে এই ব্যাক্তি সিন্দুকের ১০০ স্বর্ণমুদ্রার মালিক।
পরবর্তীতে যখন আপনি এই মুদ্রা ব্যবহার করতে চাইবেন যেমন প্রতিবেশীর থেকে আপনি একটি জমি কিনবেন তখন আবার সিন্দুক থেকে মুদ্রা তুলে আনতে হবে। এভাবে কিছুদিন যাবার পরে মানুষ ভাবতে শুরু করল সিন্দুকে গিয়ে সোনা না তুলে কেবল প্রতিবেশীর হাতে কাগজ তুলে দিব আর প্রতিবেশী আমার হাতে জমি তুলে দিবে। প্রতিবেশি চাইলে যখন ইচ্ছা তখন স্বর্ণকারের সিন্দুক থেকে মুদ্রা তুলে আনতে পারে এবং নিজ প্রয়োজন মাফিক খরচ করতে পারে। এইভাবে ১০০ স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে আপনি একটি জমি নিবেন কেবল কাগজ বদল করে।
এক সময় দেখা গেল বড় কেনা কাটায় মানুষ কাগজ গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে স্বর্ণ না তুলে সবাই বরং কাগজ হাত বদল করেই অন্যান্য কেনা কাটাও শুরু করল। এইভাবে ছোট বড় বিভিন্ন নোট বের হতে থাকল যার নাম দেওয়া হল ব্যাংক নোট বা টাকা। এভাবেই কাগুজে মুদ্রার প্রবর্তন হল।
আপনারা হয়তো ভাবছেন কবে সর্বপ্রথম এই কাগুজে মুদ্রা উদ্ভাবিত হল। সর্বপ্রথম চীনে ৭ম শতাব্দীতে তামার মুদ্রার বিপরীতে কাগুজে মুদ্রা উদ্ভাবিত হয়। তবে প্রথম স্থায়ী ব্যাংক নোট আনে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড, ১৭ শতাব্দিতে।
আজ আমরা জানলাম গোল্ড পেপার মানির কিভাবে সূচনা হল। আগামীতে আলোচনা হবে কিভাবে গোল্ড মানি ব্যাবস্থা বিলুপ্ত হল এবং ধীরে ধীরে আমরা হাওয়াই টাকার যুগে প্রবেশ করলাম।