ছোট বেলা থেকেই হয়তো এই মিথ্যা কথাটি শুনেছেন যে ইংরেজরা আমাদেরকে সভ্য করেছে।
অনেকেই ভাবতে পারেন কথা সত্য। তারা আমাদেরকের ইংরেজি ভাষা শিখিয়েছে, রেল লাইন দিয়েছে, আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে, প্যান্ট শার্ট পরা শিখিয়েছে এবং অফিস আদালত খুলেছে। সত্যই তো ইংরেজরা আমাদের সভ্য করেছে। মিথ্যা কথা কেন হবে?
ইংরেজরা ভারতে আসার পর সর্বপ্রথম যেই ক্ষতিটি করে তা হচ্ছে কৃষিকে ধ্বংস করে দেওয়া। তাদের
সমস্যা হচ্ছে ১৮৮০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে, ব্রিটিশরা ১০ কোটি ভারতীয়কে খাদ্যাভাবে নিধন করেছিল, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন, মাওবাদী চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সমস্ত দুর্ভিক্ষের সম্মিলিত মৃত্যুর চেয়ে বেশি। তাদের শাসনামলের ২০০ বছরে ভারতের অর্থনীতি কোন প্রবৃদ্ধি পায় নাই এবং তাদের বিদায় কালে অশিক্ষার হার প্রায় ৯০% এ পৌঁছায়। যেই দেশে ভাতের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে সেখানে পড়াশোনা কে করবে? কাউন্সিল বিল নামে অভিনব পদ্ধতিতে তারা ভারত থেকে সোনা চুরি করে। সেই সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্য সোনার মুদ্রায় বিক্রি হতো এবং এই সোনা জমা হতো লন্ডনে। কিন্তু ভারতীয় কৃষক ও তাঁতিদের তারা সোনার মোহর না দিয়ে কাগজের রুপি ধরিয়ে দিতো।
এতো কিছুর পরেও অনেকে বলতে পারে, “তারা আমামাদেরকে রেল লাইন দিয়েছে, স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা-দিক্ষা দিয়েছি ইত্যাদি।” এই কথা গুলো বৃটিশদের শেখানো মিথ্যা বুলি ছাড়া আর কিছু না। কারণ থাইল্যান্ডে রেল লাইন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় সব আছে। বরং আমাদের থেকে বেশি আছে। কিন্তু তারা কারো উপনিবেশ ছিল না। পৃথীবির সবচেয়ে বড় রেল নেটওয়ার্ক আছে চীনে যা বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতের চেয়ে বহুগুণ বড়। কিন্তু চীন কোনদিন ইউরোপের উপনিবেশ ছিল না। বরং এশিয়া ও আফ্রিকার ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো মারাত্মক দুর্নীতিগ্রস্ত, দরিদ্র ও প্রযুক্তিগত ভাবে অনুন্নত।
তা তো হবেই। যা শিখিয়েছে, তার প্রভাব কিছু থাকবে না!
মোহাইমিন পাটোয়ারী
ভিয়েতনাম যুদ্ধে কেবলমাত্র গ্রামে গঞ্জেই ৪০ লাখ টন বোমা আকাশ থেকে বর্ষণ করা হয়। শহর অঞ্চল সহ এর পরিমাণ ৫০ লাখ টন।
আপনি কল্পনা করতে পারেন সংখ্যাটা কত বড়?
ধরুন একটি ছোট পিকআপ ট্রাকে করে এক এক টনের একটি বোমা বহন করে নেওয়া হলো। এমন ৫০ লাখ পিক আপ ট্রাক।
আমাদের দেশে গ্রামের সংখ্যাই ৮৭ হাজার। আর জনসংখ্যা ১৭ কোটি। সেই তুলনায় ১৯৭০ সালে ভিয়েতনামের জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি মাত্র। অর্থাৎ, জন প্রতি ১২৫ কেজি বোমা। জি, একটি দেশের প্রতিটি মানুষের ওজনের দ্বিগুণের অধিক পরিমাণ বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল আকাশ থেকে। এর সাথে জাহাজ ও সেনা বহর থেকে নিক্ষিপ্ত বোমার পরিমাণ যুক্ত করলে সংখ্যাটি দেড় গুণ বৃদ্ধি পায়। নির্বিচারে নিহত হয় বেসামরিক লোকজন। শিশু বৃদ্ধ কেউই নিহতের তালিকা থেকে বাদ পড়ে না।
কেবল ভিয়েতনাম নয়, জাপান, সিরিয়া, ইরাক, আফ**, জার্মানির অসংখ্য বেসারমিক শহরে এই প্রক্রিয়ায় বোম্বিং করা হয় অনেক আগেই। আমি যখন ড্রেসডেনে ভ্রমণ করতে গিয়েছিলাম তখন জানতে পারলাম সেই শহরের বেসামরিক নাগরিকদের উপর যুদ্ধের শেষের দিকে তেরশো বিমান টানা তিন দিন প্রায় চল্লিশ হাজার টন বোমা নিক্ষেপ করে। সমস্ত শহর সেই সময় আগুনের সাগরে পরিণত হয়েছিল। মানুষ পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। পুড়ে পুড়ে সবাই ছাই হয়েছে —
এবার বলুন তো – সভ্যতা কি? সেই সংজ্ঞা তারা এসে আমাদের শিখিয়ে যাবে?