এস এস সি তে ফেল করলেও কলেজে ভর্তি হবার সুযোগের অনুমোদনকে সাধুবাদ জানাই। কেবলমাত্র এক – দুইটি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার জন্য কাউকে এক বছর ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত কোনদিন সমর্থন করতাম না। অনেক সময় দেখা যায় কারো বাবা-মা কিংবা আত্মীয় স্বজন মারা যায়। অনেক সময় মানুষ নিজে বিপদে পড়ে (যেমন গাড়ি না পেয়ে, হটাত আহত হয়ে বা পারিবারিক সমস্যার কারণে) একটা পরীক্ষা দিতে পারে না। পরীক্ষার হলেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই সব কিছু বাদ দিয়েও যদি ধরি একজন শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পাশ করার পর কেবলমাত্র একটি বিষয়ে খারাপ করেছে; তার জন্য কি এক বছর অপেক্ষা করতে হবে?
চিন্তা করে দেখেছেন নিজ বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠীরা যখন উপরের ক্লাসে উঠে পড়ে তখন নিজের জন্য পিছিয়ে পড়া কত অপমানজনক? এমন একজন শিক্ষার্থী না পারে ছোট ক্লাসের সাথে মিশতে, না পারে বড় ক্লাসের সাথে পড়া শুনা করতে। পুরা সমাজ পরিবর্তীত হয়ে যায় তার জন্য; নামের সাথে দাগ লেগে যায়। মনে মনে প্রচন্ড লজ্জা ও হীনমন্যতায় অনুভব কতে সে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে প্রায়ই এমন হতো যে একজন এক বিষয়ে ফেল করেছে। এর ফলে তাকে বসে থাকতে হয় নাই। বরং সবার সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছে এবং পরবর্তীতে ভালো ফলাফল করেছে। কেউ বিষয়টি জানলোও না, সব জায়গায় অপমানিত এবং বন্ধু বান্ধব হারাও অনুভব করলো না। কত সুন্দর ব্যবস্থা।
সেই তুলনায় যদি তাকে বলা হতো এক বিষয়ে ফেল করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে বর্ষে উঠতে পারবে না, বিষয়টি কত কষ্টকর হয় এখন ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য ভেবে দেখেছেন? অনেকে এই দুঃখে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। আমার পরিচিত অনেকে আছে যারা এর দ্বারা শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়েছে এবং লেখাপড়ার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উঠেছে। এখন লেখাপড়ার প্রতি হতাশায় ভুগে। বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে উৎসাহমূলক পরিবেশ তৈরি করা কাম্য। শিক্ষকের আচরণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম হবে বন্ধু সুলভ – পড়াশোনার সদিচ্ছা থাকলে তাকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা হওয়া উচিত লক্ষ্য। সেই দিকে চেষ্টা না করে কাকে কীভাবে কাকে আটকানো যায় তা মানুষের মনে লেখাপড়ার তৈরি বিতৃষ্ণা তৈরি করে। সব মিলিয়ে লেখাপড়া জিনিসটাই হয়ে যায় আতংক। আমাদের দেশের শিক্ষায় অনেক সমস্যা ছিল, আছে এবং নতুন সমস্যা তৈরিও হচ্ছে। তবে ফেল করার পরেও পরবর্তী ক্লাসে উঠেতে দেওয়ার সুযোগ একটি সুন্দর পরিবর্তন। আশা করি কলেজের পাশাপাশি স্কুলের ক্লাসগুলোতেও এই সুযোগ দিলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।