যেই ব্যক্তিকে আপনি এক বোতল বিষ খাওয়াননি তাকে অনেক যুক্তি দিয়ে বোঝাতে পারবেন যে এইটা বিষ না। এইটা মধু।
কিন্তু যিনি বিষ খেয়ে হজম করেছেন তার কাছে কি কোন যুক্তি খাটে?
কিছুদিন আগের কথা। একজন সিনিয়র আইনজীবী (সাজ্জাদ সরোয়ার) জানিয়েছেন, “তার পরিচিত একজন প্রচন্ড বিপদে আছেন। অল্প কিছু টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মোট দায় চক্রবৃদ্ধিতে বেড়ে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা হয়ে গেছে। এখন ওনার ঘর বাড়ি বিক্রি করার উপক্রম। যেকোন প্রসিদ্ধ একটা ইসলামি ব্যাংক থেকে তিনি এই ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন পথে বসার উপক্রম।”
এগুলো ইসলাম? আমার জানামতে ইসলাম হালাল করেছে ব্যবসাকে এবং কর্জে হাসানাকে। এইটা কি কোন কর্জে হাসানা? নিশ্চয়ই না। এইটা কি ব্যবসা? নতুন লেনদেন ছাড়া ব্যবসা সম্পদ বাড়ে কীভাবে? আপনার জীবনে এমন কোন ব্যবসা করেছেন কি?
এগুলো বললে মানুষ বলে আপনি কি কেবল ইসলামি ব্যাংকের সমস্যাই দেখেন? উত্তর হচ্ছে না। আমি সুদের সমস্যা দেখি। আজ থেকে দেড় বছর আগে বইতে লিখে দিয়েছিলাম যে ধীরে ধীরে সব ব্যাংকগুলোই ইসলামি ব্যাংকিং শুরু করবে। আপনারা অবাক হয়ে দেখছেন যে ঠিক তাই হয়ে চলছে।
কিন্তু আমি দেখেছি খুব সহজ যুক্তি। তার কারণ ইসলামি ব্যাংকগুলো সুদের চেয়েও লাভজনক। এখানে অডিট রিপোর্টে নয় ছয় করে ঘোল খাওয়ানো যায়। আবার ইসলামের নামে লস ধরিয়ে দেওয়া যায় গ্রাহকদের হাতে। সব মিলিয়ে ইসলামি ব্যাংক সুদের চেয়েও লাভজনক।
একজন ধনকুবের কেন এই মডেলে যাবে না কেন? এর মাঝে তো কোন ত্যাগ নাই। কেবল লাভ আছে। ইসলামি ব্যাংক করলে মালিক পক্ষকে কি ছাড়তে হয়? মদ খাওয়া ছাড়তে হয়? ব্যভিচার ছাড়তে হয়? মোটেও না। ইহুদী খ্রিষ্টান হয়েও ইসলামি ব্যাংক করা যায়। যেমনটা দেখেছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সিটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে।
সবশেষে অনেকে বলবেন সমাধান কী? সমাধান তাই যা আগেও ছিল। ইসলামি ব্যাংক কোন প্রযুক্তি না। সাহাবীরা চাইলে টাকার বাক্স নিয়ে বসে থাকতে পারতো এবং বলতে পারতো তুমি কি জন্য ঋণ চাও? আমি কেনার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি সুদের হারে লাভ বুঝিয়ে দিও এক বছরের মধ্যে।
সুদ কি ১৪৫০ বছর আগেও ছিল না? তাহলে ইসলামি সুদ ছিল না কেন? ইতালিতে তো ৫০০ বছর আগেও মডার্ণ ব্যাংকিং ছিল। তাহলে ওসমানী সাম্রাজ্যে এইটা ছিল না কেন? ১৯৭০ এর দিকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের ইশারাতেই কেন আইডিবি যাত্রা শুরু করে?
সবশেষে অনেকে আমার কাছে সমাধান নেই। আজকে সমাধান লিখে দেই।
- ব্যাংক যদি সুদ ছাড়া বাকি সকল কার্যক্রম চালায় যেমন মানি ট্রান্সফার, লকার সার্ভিস, বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেন করা তাতে কোন অসুবিধা নেই। আমরা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কিংবা নগদে টাকা লেনদেন করছি না? সেইটা তো সুদ না। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্যাসের বিল, পানির বিল ও বেতন দেই। সেইটা তো সুদ না। ব্যাংক এখন কিছু চার্জ এর বিনিময়ে এই সার্ভিস দিচ্ছে। দিক। সুদ না থাকলে তো দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে না। সব সুন্দর চলবে।
- মানুষ কোথায় টাকা রাখবে এবং ব্যাংক সেই টাকা দিয়ে কি করবে?
এইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে এবং ব্যাংক সেই টাকা দিয়ে লাভ লোকসানের ভিত্তিতে ব্যবসা করবে। এক সাথে এক হাজার ব্যবসায় ব্যাংক বিনিয়োগ করবে। এর মাঝে কোনটা তে লাভ এবং কোনটাতে লোকসান হবে। কিন্তু সব মিলিয়ে ব্যবসায় লাভ হয়। বহু গবেষণা তাই প্রমাণ করেছে। ধরা যাক একটি ব্যাংক মোট একশ কোটি টাকা দেশের এক হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সাথে ব্যবসা পার্টনার হয়ে বিনিয়োগ করলো। তাদের সম্মিলিত লাভ আসলো 10% এখন নিজেদের সার্ভিস ফি 2% কেটে রেখে বাকি 8% সব গ্রাহকদের মাঝে ভাগ করে দিবে। শুনতে খুব আজব লাগছে? মোটেও আজব কিছু বলি নাই। ভেন্চার ক্যাপিটাল ও প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড এভাবেই পরিচালিত হয়।
হয়ে গেছে তো সব সমস্যার সমাধান। আর কোন প্রশ্ন আছে?