প্রতিটি শস্য এক একটি মুদ্রার মত যা রোপন করলে বহুগুণ রিটার্ন আসে। কিন্তু এই মুদ্রা দিয়ে কি আমরা আয় ব্যায়ের হিসেব করতে পারি? উত্তরে আমি বলবো গ্রাম অঞ্চলে অবশ্যই পারি। ধরুন, আলমারির ড্রয়ারে ৫০ হাজার টাকা জমা না রেখে আপনি আপনার ধানের গোলায় ৭০ মণ ধান জমা করলেন। শুনতে হাস্যকর মনে হচ্ছে?
চিন্তা করে দেখুন, এর বিভিন্ন উপকারিতা আছে। একটি উপকারিতা হচ্ছে এই যে ধানের মূদ্রাস্ফীতি নেই। দ্বিতীয় উপকারিতা হচ্ছে, আপনি আপনার ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংরক্ষণ করে রাখলেন। তৃতীয় উপকারিতা হচ্ছে ধান চুরি করা সহজ না। এটি অনেক ভারী। তাই ধান দেখে কারো চুরি করার লোভ জাগে না।
সত্যি কথা বলতে আমার দাদার যুগে সবাই ধান দিয়ে বাজার করত। এখন সেই দিন নাই। তবে আগের দিন সুন্দর ছিল নাকি এখনের তা চিন্তার বিষয়। টাকা ও ডিজিটাল মুদ্রা আসাতে লেনদেন সহজ হয়েছে সত্য কিন্তু এখন সরকার চাইলেই আমার ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও নগদ ফ্রিজ করে দিতে পারে। তাই কোটি টাকার অধিকারী হলেও একদিনে আমরা কপর্দকশূন্য।
আবার ব্যাংক চাইলেই আমার টাকা সুদের কারবারে খাটাতে পারে। এই ব্যাপারে আমার কোন কিছু বলার নেই। নিজে সুদ না নিয়ে, ব্যাংকের মালিকের হাতে বাড়তি সুদ দিলে (কারেন্ট একাউন্ট) সুদখোরের জন্য আরও লাভজনক।
অনেকে অভিযোগ করতে পারেন, “হাতে হাতে লেনদেন করতে তো কেউ মানা করে নাই।”
জি, আপনার কথা সত্য। আধুনিক যুগে কেউ কাউকে মানা করে না। সুকৌশলে একটি সিস্টেম দাঁড়া করানো হয় যা মেনে চলতে হয়। তারপরে বলা হয় আপনাকেতো কেউ মানা করে নাই।
যাই হোক, আধুনিক মুদ্রা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় অধিকার হরণ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি। আপনার থেকে গোপনে প্রতি বছর কিছু ক্রয়ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কে নিয়েছে সেই ব্যাপারে সবাই থাকে অন্ধকারে। কিন্তু এই ডাকাতি ঠেকানোর কোন উপায় কারো জানা নেই। আবার টাকা ছাড়া চলারও কোন উপায় নেই। সব মিলিয়ে মাইনকার চিপা অবস্থা।
শস্য মুদ্রার সবচেয়ে উত্তম দিক হচ্ছে এর উপর আপনার পূর্ণ ক্ষমতা আছে। আপনি একটি সিস্টেমের অধীন নন। তাই কোন প্রতিষ্ঠান আপনার সব তথ্য সংগ্রহ করে হাজার মাইল দূর থেকে স্যাংশন জারি করতে পারবে না। কেউ এর থেকে গোপনে প্রতি বছর নির্দিষ্ট হারে ক্রয়ক্ষমতা ডাকাতি করতে পারবে না। বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে বিকাশ – কেউ এই মুদ্রাকে কাজে লাগিয়ে সুদের ব্যবসা করতে পারবে না।
শস্য মুদ্রার প্রচলন রাতারাতি সবকিছু বদলে যাবে না সত্য। তবে আমরা এক পা হলেও ভালোর দিকে আগাবো।