রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায়ের গুরুত্ব

কেবল ব্যক্তিগতভাবে আদায় করলে আমরা যাকাতের পরিপূর্ণ সুফল পাবো না। কারণটা ব্যাখ্যা করা যাক।

মনে করেন, আপনার মসজিদের সামনে একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। সে তার পায়ে প্লাস্টার করে এসে বলল তার টাকা প্রয়োজন চিকিৎসা করাতে। আপনারা এলাকার সবাই মিলে তাকে কিছু টাকা দিলেন। সাথে সাথে সে পাশের এলাকার মসজিদে চলে গেল। সেখান থেকে আরও পাঁচ হাজার টাকা জোগাড় করে চলে গেল পরের মসজিদে। এভাবে সে শিকার শেষে বাসায় ঢুকে প্লাস্টার খুলে একটু দামী রেস্টুরেন্টে খেতে গেল। কীভাবে সম্ভব যে আপনি তাকে ডিটেক্ট করবেন? হয়তো সে একজন নাট্যকলার ছাত্র। নাটক বা অভিনয় খুব ভালো পারে।

একজন দশ জায়গা থেকে টাকা তুলবে, আবার লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা পায় দেখে আরেকজন না খেয়ে থাকবে, এই সমস্যার তো কোন সমাধান তো ব্যক্তি পর্যায়ে নেই।

যেই ব্যক্তি বয়সের ভারে জর্জরিত, যেই ব্যক্তি অসুস্থ, যেই ছেলে অনাথ সে কীভাবে যাকাতের টাকা হাতে পাবে? আপনি কি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিবেন? সেই সময় কী সবার আছে? বিশেষ করে ব্যাস্ত ও ধনী ব্যক্তিদের?

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থাকলে সুবিধা হয় কী জানেন? এক জন ব্যক্তি দুইবার যাকাত খেতে পারবে না আবার কাউকে খুঁজতেও হয় না। কারণ সারা দেশে কে কত বার যাকাত পাচ্ছে, কে সব হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে, কে অনাথ হয়েছে, কে ঋণগ্রস্ত, সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছে এগুলো সব লিস্ট করা থাকবে। প্রত্যেক একালার ধনী ব্যক্তিদের টাকা সেই নিজ নিজ এলাকায় গরিবদের দেওয়া হবে। এভাবে এলাকার মানুষদের মাঝে সম্প্রীতি তৈরি হবে।

তবে কোন এলাকায় দরিদ্র না পাওয়া গেলে (যেমন গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী) সেখান থেকে তুলনামূলক দরিদ্র এলাকায় যাকাত পাঠানো হবে।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত নিলে একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত যাকাত না দিতে পারবে না। সবার সম্পদের পরিমাণ তো রেজিস্ট্রি করাই থাকে। বর্তমানে যেমন আমরা প্রতি বছর আয়কর ফাইল জমা দেই এবং সেগুলো চেক করা হয়, তেমনি প্রতি বছর সম্পদের হিসেব চেক করে রাষ্ট্র যাকাত নির্ধারণ করে দিবে। আর সেই সম্পদ উপযুক্ত নিজ দায়িত্বে বাড়ি গিয়ে অসহায় ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ভাবতেই শান্তি লাগছে না? আপনি অসহায় হবেন, বাড়িতে সাহায্য চলে আসবে এবং তা আপনার হক। কৃতজ্ঞতায় তো চোখে পানি চলে আসবে। 

সবশেষে, এই পদ্ধতির কেউ বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বর্তমানে সেক্যুলাররা যে বলে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি দিয়ে লাভ হয় না, এভাবে আসলে দারিদ্র বিমোচন হয় না, এই তা সত্য। এই কথা সত্য যে যাকাত সত্যিকার অর্থে আদায় ও সুদ বন্ধ করলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য ধরা পড়বে।

আজ আমরা নরওয়ে, আমেরিকা যেতে চাই কেন? তাদের দেখে হিংসা হয় কেন? কারণ সেখানে সামাজিক নিরাপত্তা আছে। সেখানের মানুষদের জীবনের প্রয়োজনগুলো পূরণ হচ্ছে। কিন্তু আমি বলি ইসলামের অর্থনীতির সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারলে অমুসলিমরা দেখতো আমাদের দেশে কেউ অভাবী হলে তার বাড়িতে সাহায্য চলে আসে এবং এইটা তার অধিকার। এর জন্য রাষ্ট্র বা ধনী কেউ প্রভাব খাটাতে পারে না তার উপর। তখন তারা আমাদের দেশে ঈর্ষা করতো এবং মনে মনে আশা করতো যদি আমাদের মত ব্যবস্থা তাদের দেশেও থাকতো। এভাবেই তো মানুষ ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে এবং দলে দলে এই ধর্ম গ্রহণ করেছে। আজ আমরা সেই রাস্তা থেকে এতটাই দূরে সরে এসছি যে নিজেরা এই সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং দলে দলে তাদের দেশে পাড়ি জমাচ্ছি।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *