মুক্তবাজার অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি

অর্থনীতিতে আমরা একটা টার্ম খুব বেশি ভালবাসি, সেটা হল ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’। অর্থাৎ, ভাই, আর যাই কর, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে যেও না। বাজার তার নিজের গতিতে চলতে পারলে সবাই শান্তিতে থাকবে।

এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সরকার ভুল করে আর জনগণ কষ্ট করে। তেমনি সিন্ডিকেটও তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে আর সরকার সিন্ডিকেট ভাঙ্গার চেষ্টা করে। এজন্য সরকারের সাথে সিন্ডিকেটের নিরন্তর টম এন্ড জেরি খেলা চলে। কখনো কখনো দুর্নীতিবাজ সরকার সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করে দেশের মানুষকে শোসন করে ব্যাপকভাবে বড়লোক হতে, সেক্ষেত্রে সেই দেশ নানারকম অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন মুদ্রাস্ফীতি ও উৎপাদন কমে গিয়ে দাম বেড়ে যাওয়ার মত সমস্যায়  পড়ে যায়।

২০০ বছর আগেও এখনকার মত সীমানা সিস্টেম ছিল না। সারা বিশ্ব ছিল সবার জন্য উম্মুক্ত। আচ্ছা, এখন যদি পুরো বিশ্ব উম্মুক্ত থাকতো সবার জন্য, তাহলে ফ্যাক্টর অব প্রোডাকশন হিসেবে মানুষের কি অবস্থা হত? আয়ের কি অবস্থা থাকতো কিংবা বেকারত্বের হার কত হত?

চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, মুক্তবাজার অর্থনীতি বলে, সারা বিশ্বের সব দেশের সীমান্ত যদি উন্মুক্ত থাকতো তাহলে দেশে দেশে মাথা পিছু আয়ের বিশেষ তারতম্য থাকতো না! যেই দেশে কাজ করলে আয় বেশী হবে, যেই দেশে কাজ বেশি থাকবে, সবাই সেই দেশে চলে যাবে কাজের সন্ধানে।

একদম বাচ্চাদের পাটিগণিতের মত সাধারণ ডিমান্ড-সাপ্লাই থিউরি দিয়েই এই ঘটনা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়। আমরা জানি যে, বাকি সবকিছু আগের মতন থাকলে সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে দাম কমে যায়। তাই সবাই কাজের সন্ধানে এক দেশে যেতে থাকলে সেই দেশের শ্রম বাজারে বাড়তি কর্মী সরবরাহের দ্বারা বেতন কমে যাবে। আবার যদি কোন দেশে অতিরিক্ত কর্মী কিন্তু স্বল্প কাজ থাকে তাহলে সেখান থেকে সবাই নানা দিকে চলে যাবে। এভাবে শ্রম বাজারে শ্রমিক সরবরাহ কমে মানুষের বেতন বা মাথাপিছু আয়ও বেড়ে যাবে।

একটি বাস্তব উদারহণ দিলে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের তুলনায় আমেরিকার মাথাপিছু আয় বেশী। তাই বাংলাদেশ থেকে সবাই চাইবে যেকোন মূল্যে আমেরিকাতে যেতে। কেবল বাংলাদেশ না, ইকুয়েডর, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা সহ অনেক দেশের মাথাপিছু আয়ই আমেরিকার তুলনায় কম। তাই তারা সবাই চায় আমেরিকাতে যেতে। কিন্তু আমেরিকানদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তা। একটি সমৃদ্ধ পরিবার কি কোনদিন চাইবে একশ দরিদ্র ব্যক্তিকে নিজ পরিবারের সদস্য ঘোষণা করে সবার মাঝে সমতা রক্ষা করতে? এটি পরিবারের বর্তমান সদস্যদের স্বার্থবিরোধী। ঠিক তেমনি এটিও একটি রাষ্ট্রের বর্তমান নাগরিকদের স্বার্থবিরোধী যে, যাকে তাকে নিজ দেশে ডেকে শ্রমবাজার ঘন করে মাথাপিছু আয় কমিয়ে ফেলা। সেজন্যই আমরা নাগরিকত্বের ধারণা আমি এবং নিজেদের সমৃদ্ধি ধরে রাখার চেষ্টা করি।

এই মুহুর্তে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সারা বিশ্ব এক দেশের মতন হলে সকল অঞ্চলের মাথাপিছু আয় কি শতভাগ এক রকম থাকতো?

উত্তর হচ্ছে, না। তবে কাছাকাছি থাকতো। একটি দেশের অভ্যন্তরে যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয় ভিন্ন ভিন্ন হয়, তেমনি সমগ্র বিশ্ব এক দেশ হলেও অঞ্চল ভেদে মাথাপিছু আয় ভিন্ন ভিন্ন হতো। যেমন একটি দেশের ধনী ব্যক্তিরা রাজধানীতে থাকে, এভাবে রাজধানীর মাথাপিছু আয় অন্যান্য অঞ্চলের থেকে সাধারণত বেশী থাকে। আবার দুর্গম অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ কম। সেজন্য সেখানে মাথাপিছু আয় কম থাকে। এমন আরও বিভিন্ন কারণে ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মাথা পিছু আয় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *