মসজিদের উন্নয়নের দিকে আমরা যত ব্যস্ত হয়ে পড়ি মুসল্লির উন্নয়নের প্রতি হয়ে পড়ি তত উদাসীন। আর গরিবের হকের ব্যাপারে কথা বলা তো হয়ে পড়ে অন্যায়। দান খয়রাতের যত বয়ান হয় সব হয় মসজিদ কেন্দ্রিক, মদ্রাসা কেন্দ্রিক আর ওয়াজ মাহফিল কেন্দ্রিক।
কিন্তু কুরআন আমাদের কি শিক্ষা দেয়? আপনি কি জানেন, পবিত্র কুরআনে মসজিদে দানের ব্যাপারে একটা আয়াতও নাই। একেবারে একটাও না।
তাহলে কুরআন কাদেরকে দান করতে বলেছে? জি, অনেক বার কুরআনে দান করতে বলা হয়েছে ক্ষুধার্তদেরকে, ধূলি মলিন মিসকিনদেরকে, এতিমদেরকে, যারা অভাবী হয়েও লজ্জায় চাইতে পারে না তাদেরকে, প্রতিবেশী, আত্মীয় এবং মুসাফিরদেরকে, যারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছে তাদেরকে। একবার দুইবার না। অনেক অনেক বার এই খ্যাঁট গুলোর উল্লেখ আছে একের পড় এক সুরায়। কিন্তু বিশ্বাস করেন, মসজিদে জুমার নামাজে এই বয়ান গুলো আমি পাই না। আপনারা আপনাদের মসজিদে পান কি?
অথচ মসজিদের উন্নয়নের অভাবে ইসলাম কোনদিন পিছিয়ে যায় নাই। মুমিনদের উন্নয়নের অভাবে ইসলাম পিছিয়ে গেছে। যেই মুসলিম জাতি গরিব, বেকার, অভাবী ও ক্ষুদার্তদের হক নিয়ে কথা বলে না এবং মুসল্লিদের উন্নয়নের চেয়ে বরং অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তারাই ইসলামের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে তো মনোযোগী ছিল ফেরাউন। সেজন্য আজ পর্যন্ত তার স্থাপত্যগুলো আমরা দেখতে পাই কিন্তু তাকে ভালবাসে এমন কাউকে খুঁজে পাই না। সেই তুলনায় রাসূল সা. এর ঘর দেখাতে পারবেন কেউ আমাকে? নাকি হযরত আবু বকরের? তাদের তৈরি করা প্রাসাদ কই? কিংবা সুরম্য মসজিদ।
তারা তো কিছু রেখে যান নাই। কিন্তু তার পরেও তারা কত জীবন্ত। তাদের নামে গালি দিলে কোটি মানুষ সৈনিকের ন্যায় দাঁড়িয়ে যায়। জীবন দিয়ে লড়াই করে। সকাল সন্ধ্যায় তাদের কথা আলোচনা হয়।
অছচ আমরা অনুসরণ করলাম ফেরাউনকে। সেজন্য আমরা মসজিদে আমরা ধনীদের সম্মান করি। তাদের বিরুদ্ধে হক কথা বলতে ভয় পাই। যেহেতু তাদের অনেকেই দুর্নীতি ও সুদের সাথে জড়িত, এসকল বয়ান করি না। তারা পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করেন তাই মসজিদের দরজা তালা মেরে রাখি। আদর করে তাদের কাছে ডেকে বসাই। অন্যদিনে মুত্তাকী গরিবকে পাত্তা দেই না। তাদেরকে মসজিদ কমিটিতে স্থান দেই না।
চিন্তা করে দেখেন তো, আমরা আসলে আল্লাহর দেখানো মডেল নাকি ফেরাউনের মডেল অনুসরণ করছি?
মুখে আমরা বলি বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলবো কিন্তু এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে গালিগালাজ শুরু করি, মসজিদে এসি খুঁজি, উন্নত জীবনের জন্য মৃত্যুকে পরোয়া না করে ইউরোপে যাই। আবার জবানে বলি ইসলামের জন্য বিপ্লব করে ফেলবো। বিপ্লব এতোই সোজা। যেই অন্তর দুনিয়ার মোহ এবং বিলাসিতার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে সেই অন্তর দিয়ে কি ইসলামের আবাদ হবে? মসজিদ তো হওয়ার কথা ছিল এমন জায়গা যেখানে মুমিনের অন্তরের আবাদ হবে। কিন্তু এখন মসজিদ হয়ে গেছে বিলাসিতার শিক্ষা দেওয়ার কেন্দ্র। ধ্বংস আমাদের হবে না তো কি অন্য কোন জাতির হবে?