আমাদের দেশের মানুষরা এমন একটি বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে যে ইংরেজি ভাষা ব্যতীত জ্ঞানের দরজা বন্ধ। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চাইলে ইংরেজি ভাষা জানা বাধ্যতামূলক। আপনি তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে জানবেন? ইংরেজি ছাড়া অসম্ভব। আপনি পদার্থবিজ্ঞান শিখবেন? তাও ইংরেজি ছাড়া অসম্ভব। কিন্তু সবাইকি বিদেশী ভাষায় পারদর্শী হতে পারে? এমনটা কি খুব স্বাভাবিক নয় যে, যেই ব্যক্তি পদার্থবিজ্ঞানে ভালো, সে ইতিহাসে পারদর্শী না? তাহলে যে ব্যক্তি জীববিজ্ঞানে ভালো, সে ইংরেজিতে পারদর্শী হবে কোন যুক্তিতে? এখন আপনারাই বলেন এই দেশে ভালো ডাক্তার বা প্রকৌশলী তৈরি হবে কীভাবে? কেবলমাত্র ভাষাগত দক্ষতার অভাবেই তো অনেক অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে ঝরে পড়ে।
বিদেশী ভাষায় শিক্ষা অর্জন করে সফল হওয়ার চেষ্টা একটি জাতির জন্য ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ব্যর্থতা। সেজন্যই যেই সমস্ত জাতি প্রযুক্তি, শিল্প ও জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উচ্চ হতে পেরেছে, তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এবার একটিবার চিন্তা করে দেখুন আপনি একজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। আপনি চাচ্ছেন অর্থনীতি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে খুতবা দিবেন কিংবা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন। অথবা আপনি স্কুলে অমনোযোগী ছাত্র ছিলেন। কিন্তু আপনার ব্যবসা প্রতিভা আছে। বর্তমানে চাইছেন একটি ব্যাটারি রিকশার ফ্যাক্টরি দিবেন। আপনার জন্য কি এই বিষয়ে জানার কোন সুযোগ আছে? সেজন্যই আমরা দেখি ধর্ম কেন্দ্রিক সকল আলোচনা অনেক ক্ষেত্রেই হয় আবেগী এবং ব্যবসা হয় নকল। প্রযুক্তি ও জ্ঞানের জগতে মাদ্রাসার ছাত্ররা বা ব্যবসায়ীরা অবদান রাখতে পারছে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে রাখবে কীভাবে? তাদের জন্য কী সেই সুযোগ আছে? আমরা তো নিজ ভাষাতে কিছুই করে যেতে পারি নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের অবস্থা আরও শোচনীয়। সারা জীবন বাংলা পড়ে যখন তারা দেখে সব কিছু ইংরেজিতে, তখন ভাষা রপ্ত করতে করতে শিক্ষা জীবনের সোনালী দিনগুলো শেষ হয়ে যায়। মেধার কি নিদারুণ অপচয়! তার চেয়ে বড় অপচয় সরকারি অর্থের। কেননা যতো কোটি টাকা ইংরেজি শিক্ষার পিছনে ব্যয় করা হয়েছে তার একশ ভাগের এক ভাগও যদি অনুবাদের পিছনে ব্যয় করা হতো, আমরা আজ অন্য জাতির ভাষার উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারতাম। এত এত শক্ষার্থীর এত শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় ইংরেজি শেখার পিছে কিন্তু শিক্ষক পর্যন্ত ইংরেজিতে সুন্দর করে কোথা বলতে পারে না বা পত্রিকা পড়ে ঠিকমতো বুঝতে পারে না। গত একশ বছরের চেষ্টাতেও আমাদের বিনিয়োগের ফলাফল শূণ্য যদিনা মেধা পাচারকে ঋণাত্মক ফলাফল হিসেবে গণ্য করেন। এমন হতাশ ও দিগবিভ্রান্ত জাতির জন্য এই অধম বান্দা কাজ করে যাচ্ছে। কোন সরকারি অর্থায়নে না। বরং নিজ ঘুম, সংসারের সময় এবং চাকরির টাকা ত্যাগ করে। এই আশায় যে বাংলা ভাষায় অর্থনীতির জগতকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে যাবে।