বর্তমান যুগকে কেন বায়বীয় টাকার যুগ বলা হয়?

আমরা অনেকে মনে করি টাকার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনা গচ্ছিত থাকে। আবার কেউ কেউ মনে করেন টাকার বিপরীতে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চিত আছে। কেউ আবার মনে করেন টাকার বিপরীতে বিশ্ব ব্যাংকে বা আইএমএফের কাছে সোনা গচ্ছিত আছে। সবগুলো ধারণাই ভুল। বর্তমান অর্থ ব্যবস্থায় টাকার বিপরীতে কিছুই নেই।

টাকার বিপরীতে ডলার থাকলে তাতেও কিছু যায় আসে না। কারণ ডলারের বিপরীতে কিছুই গচ্ছিত নেই। শুণ্যের সাথে শুণ্য যোগ করলে ফলাফল শুণ্যই হয়। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলেই যত ইচ্ছা তত টাকা ছাপাতে পারে।

এই কথা সত্য যে একদা টাকার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ গচ্ছিত থাকতো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর স্বর্ণের মজুদ অনেক কমে যায় এবং এই অবস্থায় তাদের মুদ্রার বিপরীতে পর্যাপ্ত স্বর্ণ মজুদ রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তাই বিশ্বযুদ্ধের সেই সংকটের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, একমাত্র মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্বর্ণ মজুদ থাকবে প্রতি ৩৫ ডলারের বিপরীতে ১ আউন্স এবং বাদ বাকি সকল মুদ্রার মান মার্কিন ডলার এর বিপরীতে নির্ধারিত হবে। এই চুক্তির কারণে মার্কিন ডলারই হয়ে দাঁড়ায় সোনার বিকল্প এবং আন্তর্জাতিক “রিসার্ভ কারেন্সি”।

কিন্তু আমেরিকা তার কথা রাখেনি। অতিরিক্ত মার্কিন ডলার ছাপানোর ফলে স্বর্ণের বিপরীতে ডলারের দাম হু-হু করে পড়তে থাকে। এমনকি ১৯৭১ সালে মার্কিন ডলারের দাম প্রতি আউন্স স্বর্ণের বিপরীতে ২০০ ডলারে নেমে আসে। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপের দেশগুলো ডলারের বিপরীতে সোনা ফেরত চায়। তখন পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ১৯৭১ সালের ১৫ই আগস্ট স্বর্ণের মজুদ ব্যবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করেন ।

এই এক ঘোষণায় পৃথিবীর সকল মুদ্রা ফিয়াট কারেন্সিতে পরিণত হয়, অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে মুদ্রার বিপরীতে মূল্যবান সম্পদ জমা রাখা নেই। তাই আমরা সবাই বায়বীয় টাকার যুগে বসবাস করছি।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *