ঘুরিয়ে সুদ বনাম ব্যবসা

খুবই খুশির সংবাদ,

মৌলোভীবাজার থেকে একজন ফোন দিয়ে বললেন তিনি নাকি হালাল ভাবে ব্যাংকিং করেন। আমি শুনে বেশ আনন্দিত হই। কিন্তু কিছুক্ষণ কথা বলার পর বুঝতে পারি তিনি আসলে ক্ষুদ্র ঋণ দেন।

আমি কঠোর গলায় প্রশ্ন করলাম, “আপনার সাথে ব্যাংক গুলোর পার্থক্য কী?”  তিনি বললেন, “আমি বাজার করে দেই।”

আমি প্রশ্ন করলাম, “কীভাবে বাজার করেন?” উত্তরে তিনি বললেন, “মনে করেন কারো ছাগল কেনার জন্য ‘টাকা’ প্রয়োজন আমি তাকে ছাগল কিনে কিস্তিতে বাড়তি টাকা তুলি। ছয় মাসে ৮% রেটে।”

“তারমানে আপনার বার্ষিক সুদের হার ১৬%?”

তিনি বললেন, “এইটা তো সুদ না।”।  আমি বললাম তাহলে তো ইসলামি ব্যাংকও ব্যবসা করে। ওদের সাথে আপনার তফাত কী? 

“তফাত হচ্ছে আমি বাজারে যাই, তারা বাজারে যায় না।”

আমি বললাম, “বাজারে যাওয়া আর না যাওয়ার জন্য আল্লাহ এক পক্ষকে জাহান্নামে নিবে এবং আরেক পক্ষকে জাহান্নামে নিবে? এমন হলে তো আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত যত ব্যাংক আছে সবাই বাজারে ঘুরে এসে সুদকে হালাল করে ফেলতো।” 

“আপনি কি ডেপজিট নেন?” তিনি বললেন, “নেই”

“আপনার কাছে মাল আছে?”

“না, মাল নেই কোন”

“আপনি কি  ব্যবসায়ী?”

” না, ব্যবসায়ী না। আমি ঋণ দেওয়ার জন্য বাজার করে কিস্তিতে বাড়তি ফেরত নেই।”

“তারমানে আপনার কাছে টাকা ছাড়া আর কিছু নেই। আপনার টার্গেট টাকা দিয়ে টাকা বাড়ানো। মাঝখানে একটা ব্যবসা বাহানা করলেন সুদকে হালাল করতে। আচ্ছা, আপনি বলেন তো আপনি সরাসরি টাকা দিলে কি পার্থক্য হতো? আর ব্যবসা বাহানা করেই বা কি উপকার করেছেন?”

তিনি চুপ, আমি আবার প্রশ্ন করলাম, “যদি একটা সুদ হয় আর একটা ব্যবসা হয় এদের মাঝে কোনই অর্থনৈতিক পার্থক্য নাই?”  

তিনি বললেন, “তাহলে ব্যবসা কোনটা?”

আমি বললাম আপনি ছাগল কিনে দিবেন, সেই ছাগল তারা পালবে তারপরে  ছাগল বড় করে বিক্রি করার পর বিক্রির লাভ ভাগাভাগি করবেন আপনারা। কোন কারণে পশু মারা গেলে লোকসান দুই জনের। আবার ছাগলের দুধ ও বাচ্চা বিক্রি করে যেই আয় হয় তাও আপনারা ভাগাভাগি করতে পারবেন।”

এবারে তিনি বললেন, “আসলে আমরা আগে এমন করেছি পরে এই বাহানা মডেলে চলে আসি।”

আমি বললাম, “আল্লাহ কি আপনার ভিতরে সাড়া দেয় নাই? আমরা যখন ব্যবসা করি তখন আমাদের মনে কোন সন্দেহে থাকে না। কিন্তু যখন ঘুরিয়ে সুদ খেতে যাই, ভিতর থেকে মন খচ খচ করতে থাকে। বিশেষ করে নামাজ পড়ার পর। আপনি নামাজ পড়েন?”

“হ্যাঁ, পড়ি”

“তাহলে তো মনে হয় মনে মনে সন্দেহ হওয়ার কথা। আচ্ছা, সেই জন্যই কি আমাকে কল দিয়েছেন?”

এবারে হেসে উত্তর দিলেন, “জি, সেটাই।”

“কিন্তু আগে যখন ব্যবসা করতেন তখন মনে কোন সন্দেহ ছিল না। তাই না?”

“জি, ঠিক বলেছেন।”

“তাহলে কথা দেন এখন থেকে আগের মডেলেই ব্যবসা করবেন।”

তিনি কথা দিলেন তাই করবেন। 

আমি আবারো বললাম, “মনে থাকে যেন।”

তিনি বললেন, “জি, ইনশাল্লাহ”

মনটা শান্ত হয়ে গেল। পরে জানতে পারলাম উনি একই সাথে শিক্ষক, বই ব্যবসায়ী এবং ধার্ম প্রাণ মানুষ। বলে দিয়েছি কোন সমস্যা হোলে কল দিতে। সমাধান সম্ভব। দরকার কেবল উদ্যোগ নেওয়া। কিছুদিন আগে একজন ব্যবসায়ী বলেছেন তিনি আমদানী করেন। বিশ লাখ টাকার পণ্য আমদানী করবেন। যেগুলো বাজারে ২২  লাখ টাকায় বিক্রি হয় বাজার মূল্যে। হাতে টাকা নেই, এখন তিনি কীভাবে ব্যবসা করবেন। সহজ উপায়, কারো থেকে বিশ লাখ টাকা নিবেন। যিনি টাকা দিয়েছেন মাল তার। আপনি ইম্পোর্ট করে বিক্রি করে দিবেন। নিজে এই কাজের বিনিময়ে লাভের একটা অংশ নিবেন পারিশ্রমিক হিসেবে আর যিনি মাল কিনে দিয়েছেন তিনি লাভের একটা অংশ পাবেন মালিক হিসেবে। মাঝখানে মাল পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে মালিকের লোকসান হবে। এই ব্যবসা বুঝার জন্য কি পিএইচডি লাগে? না, একটু মাত্র চেষ্টা প্রয়োজন। সমধান আছে এবং ছিল। চাইলে আপনিও তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন ইনশাল্লাহ।

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *