পবিত্র কুরানের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মিসকিনদের খাওয়ানোর কথা। উহদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে তার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে পেট ভরে এক বেলা খাওয়াতে হবে। আবার কেউ যদি কসম ভঙ্গ করে তার জন্য বিধান হচ্ছে ১০ জন মিসকিনকে পেট ভরে খাওয়ানো।
আল্লাহ কিন্তু বলেন নাই যে রোজা না রাখলে আমাকে কিছু টাকা দান করো কিংবা মসজিদের মিনার উঁচু কর বা পুরোহিতদের ডেকে খাওয়াও। অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে সাধারণত এমনটাই দেখি। পাপের প্রায়শ্চিত্তের ব্যয় যায় মন্দিরে, গির্জায় অথবা পুরোহিতদের কাছে।
কেবল তাই না। সূরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে অস্বীকারকারীরা বলে আমরা কি তাদেরকে খাওয়াবো যাদেরকে আল্লাহ চাইলে নিজেই খাওয়াতে পারতেন? একই ধরণের বর্ণনা আমরা পাই সুরা মাউনে। বিচার দিবস অস্বীকারকারীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে এমন ব্যক্তি মিসকিনদেরকে খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহিত করে না।
কেবল তাই না। জাকাতের মাধ্যমে সরাসরি ধনীদের টাকা গরিবদেরকে দিতে বলা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে এটা গরিবের হক। ধনীর দয়া না। তার পাশাপাশি মুসলিমদের ব্যাপক সদকা দিতে বলা হয়েছে। এর কোনটা আল্লাহ নিজের জন্য চান নাই। বরং বলেছেন , “আমি রাজ্জাক, তোমাদের থেকে রিজিক চাই না।”
অছচ যাকাত কেবল অর্থের উপর না, উৎপাদিত শস্য, চারণভূমির পশু ও ব্যবসার গুদামজাত পণ্যের উপর নির্ধারিত। এই সবকিছুর পাশাপাশি ইসলামে আছে ফিতরার বিধান, যার মাধ্যমে রোজার মাসে গরিবদের খাদ্য দেওয়া হয় এবং ইফতারি খাওয়াতে এত উৎসাহিত করা হয়েছে যে বলা আছে একজন ব্যক্তিকে ইফতারি খাওয়ালে তার রোজার সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে। আবার কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি দেওয়ার পরে আমরা একে অপরের গৃহে গোসত পাঠাই। এই সব কিছুর পরেও কোন যদি আপনার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে, আ;নার আত্মীয় না খেয়ে থাকে কিংবা একজন সত্যিকারের ক্ষুধার্ত ব্যক্তি না খেয়ে থাকে এবং আপনার কাছে খাবার চাইলে আপনি তাকে সামর্থ থাকা স্বত্ত্বেও ফিরিয়ে দেন তার জন্য আল্লাহর কাছে আপনাকে জবাব দিতে হবে।
কোন ব্যক্তি যদি লজ্জায় নিজের ক্ষুধা কথা না বলে ধার চায় তার জন্যও আছে ইসলামে সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা। ইসলামে সুদ মুক্ত ঋণ তথা কর্জে হাসানাকে এতো উৎসাহিত করা হয়েছে যে আল্লাহ বলেছেন আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করে ফেরত দিবেন।
এমনকি একজন চোর যদি এক বেলা খাবারের জন্য ক্ষুধার্ত অবস্থায় চুরি করে তার উপরও সেরকম শাস্তি বর্তায় না। হজরত ওমর রা এই মত দেন যে দুর্ভিক্ষের সময় কেউ যদি নিজ খাদ্য চুরি করে তার হাত কাটা যাবে না।
এবার চিন্তা করে দেখেন। এমন একটি সমাজে যেই ব্যক্তি না খেয়ে আছে তাকে আমরা কি বলব? ব্যার্থ, অযোগ্য, অলস ইত্যাদি। তাই না? এত সুযোগ সুবিধার পরেও না খেতে পরাতো ব্যার্থতা।
কিন্তু ওমর রা যখন দেখেছেন একজন মহিলা না খেয়ে আছেন তখন তিনি বলেছেন এটা আমার অপরাধ। তাই তিনি নিজ কাঁধে করে সে মহিলার ঘরে খাদ্য পৌঁছে দেন। ওনার ভৃত্য লজ্জিত হয়ে বলছিল, হে আমিরুল মুমীনিন, এ আপনি কি করছেন? জবাবে তিনি বলেন আখিরাতে কি তুমি আমার বোঝা বহন করবে?
এই হচ্ছে ইসলামের অর্থনীতি। আপনি কি এমন একটি ব্যবস্থায় থাকতে চান না? তার নাম ইসলাম হোক বা না হোক, যেখানে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আপনাকে চিন্তা করতে হবে না আমি কি খেয়ে বেঁচে থাকবেন, যেখানে ধনীর সম্পদের উপর আপনার হক নিশ্চিত। এইটাই তী ইসলামের সৌন্দর্য যা আমরা হারিয়েছি।