আমেরিকা, আইসল্যান্ড এবং ডেনমার্কের বিজ্ঞানীরা ২৯৩৫ জন পুরুষের উপর সম্মিলিত গবেষণা (১) করে দেখান যে প্রতিদিন এক গ্লাস কোমল পানীয় খেলে পুরুষের শুক্রাণুর ঘনত্ব এক মিলি লিটারে ১ কোটি ৩০ লাখ পরিমাণ কমে যায়। সবমিলিয়ে যারা কোমল পানীয় খায়, তাদের শরীরে মোট শুক্রাণুর পরিমাণ কমে ২ কোটি ৮০ লাখটি তাদের তুলনায়, যারা কোমল পানীয় খায় না । এর পাশাপাশি শুক্রাণুর চলাচল ক্ষমতা কমে যায় ৩ দশমিক ছয় ভাগ। অছচ এই শুক্রাণুর চলাচল ক্ষমতা উপর ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়া নির্ভর করে। অর্থাৎ, কোমল পানীয় কেবল যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমায় তাই না, শুক্রাণুর দ্বারা প্রজনন সম্পন্ন করার সক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।
সবশেষে, তারা রক্ত পরীক্ষা করে দেখলেন রক্তের মাঝে যৌন হরমোনের ইম্ব্যালেন্স দেখা যাচ্ছে, যা প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে দায়ী।
কিন্তু এই সকল সমস্যার উৎস কি কেবল কোমল পানীয়? নাকি অন্যান্য স্বভাব জড়িত আছে? এইটা পরীক্ষা করতে তারা সব রকমের বহিরাগত উপাদান চেক করলেন এবং আবিষ্কার করলেন কোমল পানীয়ই প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।
এইতো গেল প্রজনন ক্ষমতার কথা, এবারে স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো আলোচনা করা যাক।
এক গ্লাস কোমল পানীয়তে প্রায় ৯ চা চামচ চিনি থাকে। এত চিনি থাকলে, আমাদের কাছে এগুলো অসহনীয় মিষ্টি লাগে না কেন? তার কারণ হচ্ছে এতে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে। কার্বন ডাই অক্সাইড আমাদের জিহ্বাতে মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হতে দেয় না। তাছাড়া কোমল পানীয়তে আছে টক স্বাদের ফসফরিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড। সেজন্য অনেক চিনি মিশিয়ে এদের মিষ্টি করা হয়। এজন্যও বিষয়টি অনুভূত হয় না যে এতে কত বেশী চিনি আছে। আপনি কল্পনা করতে পারেন ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তা কতটা ভয়ংকর? এক বসায় নয় চামচ চিনি খেয়ে ফেলবেন কিন্তু অনুভবও করবেন না।
যাদের ডায়বেটিস নেই তাদের জন্যও নিস্তার নেই। কারণ, অতিরিক্ত চিনি পান আপনার শরীরে মেদ চর্বি বৃদ্ধি করে এবং হার্টের অসুখ লক্ষণীয়ভাবে বাড়িয়ে দেয়। তার চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে চিনি মস্তিষ্কে ডোপানিম নিঃসরণ করে। এর ফলে আপনি এটি বার বার কোমল পানীয় খেতে চান এবং সূক্ষ্ম নেশা অনুভব করেন। অর্থাৎ, সকল ক্ষতি জানার পরেও এর থেকে বের হতে পারেন না।
সবশেষে কোমল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে। এক কাপ চা এবং এক গ্লাস মজো, কোলা বা পেপসি প্রায় সমান ক্যাফেইন ধারণ করে। ক্যাফেইন নিজেও নেশা উদ্রেককারী এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর। সব মিলিয়ে কোমল পানীয় আমাদের জন্য বর্জনীয় একটু খাদ্য। এগুলোর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য সচেতনতার জায়গা থেকেই দাঁড়নো উচিত। সত্য সত্যই এগুলো বাদে খুব ভালো থাকবেন।
আমি ১৮ বছর যাবত এগুলো বাদে ভালো আছি। আপনিও থাকবেন। আমাদের দেশের শরবর, ফলের রস, লাচ্ছি, মাঠা, দই, দুধ ও ডাব বহু গুণ পরিবেশ বান্ধব, পুষ্টিকর এবং দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর। আপনি গাছের ফল খেলে প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয় না। গরুর দুধ, ডাবের পানি বা লেবুর শরবতে কোন ক্ষতিকারক কেমিক্যাল নেই। নদী নালার পানি বা বাতাস দূষিত হয় না এগুলোর দ্বারা। শরীরে অতিরিক্ত মেদ চর্বি জমে না, নেশা লাগে না। অর্থনৈতিকভাবে দেশের কৃষকরা উপকৃত হয়। এর জন্য মডেলদের রঙ্গিন কাপড় পড়ে, হাজার রকম প্রশাধনী মেখে ক্যামেরার সামনে নাচ-গান করতে হয় না, বাদ্যযন্ত্র বাজাতে হয় না, ক্রিকেট ফুটবল ম্যাচ স্পন্সর করতে হয় না। সবশেষে এগুলো বিক্রি করে কেউ হাজার কোটি টাকা পুঞ্জিভূত করে না।
তাই এই জাতীয় পানীয় থেকে একশ হাত দূরে থেকে প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করাটাই কাম্য।
রেফারেন্স
১ Title: Association between intake of soft drinks and testicular function in young men Authors: F L Nassan, L Priskorn, A Salas-Huetos, T I Halldorsson , T K Jensen, N Jørgensen, J E Chavarro. Journal: Human Reproduction
২ Title: Added Sugar Intake and Cardiovascular Diseases Mortality Among US Adults Authors: Quanhe Yang, PhD; Zefeng Zhang, MD, PhD; Edward W. Gregg, PhD