ইসলামি ব্যাংকের ব্যাপারে আলেমদের ফতোয়া

যেই বস্তু অর্থনৈতিক ভাবে সুদ তাকে শরিয়ার হালাল বলতে পারে না। এজন্যই অকুতোভয় আলেমরা ইসলামি ব্যাংককে বাতিল বলেছে। 

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদর মুদাররিস ও শায়খুল হাদিস মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি রহ. লিখেছেন, “সুদ খাওয়াটা এক ধরনের মাগনা খাওয়া। মাগনা পেলে নাকি কাজীর জন্য মদও হালাল হয়ে যায়!

তাই ধার্মিক লোকেরাও ‘ইসলামি ব্যাংক’ নাম রেখে সুদ খায়। অথচ ব্যাংক কখনো ইসলামি হতে পারে না। ব্যাংকের কাজ হলো মুদ্রা থেকে মুদ্রা তৈরি করা; যা সুদের অন্তর্ভুক্ত।”

(তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন: সুরা রোমের ৫৩ নাম্বার আয়াতের আলোচনা দ্রষ্টব্য)

পাকিস্তানের শাইখুল হাদিস মাওলানা সলিমুল্লাহ খান রহিমাহুল্লাহ, (সাবেক চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিস পাকিস্তান, তাকি ওসমানীর শিক্ষক) অভিমত ব্যক্ত করে বলেন,

“বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের কাছে অনুরোধ রইল। তারা যেন এ কিতাব মনোযোগ সহকারে পড়েন, তার দলিলাদির ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা ফিকির করেন। আর জনসাধারণকে এই তথাকথিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেঁচে থাকার দিক-নির্দেশনা দেন। এছাড়া আমি নিজেও সাধারণ মুসলিমদেরকে উপদেশ ও পরামর্শ দিব যে, এমন বাঘা বাঘা ওলামায়ে কেরাম ও অভিজ্ঞ মুফতিগণ যে বস্তুকে প্রত্যাখ্যান করে হারাম ও নাজায়েজ সাব্যস্ত করেছেন। তা থেকে বেঁচে থাকবেন এবং কারবার ও লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বসম্মত বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।”

1921 – 15 জানুয়ারী 2017

মুফতীয়ে আযম আবদুস সালাম চাটগামী “ইসলামী ব্যাংকের নাম এবং প্রচার ছাড়া প্রকৃত অর্থে কথিত সুদি ব্যাংক এবং প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকের লেনদেনে এতসব খারাবী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাংক ব্যবস্থাকে যায়েজ ও হালাল ফাতওয়া প্রদান করা জেনে না জেনে, সুদ বা সুদি লেনদেনকে হালাল সাব্যস্ত করা ছাড়া কিছুই নই। যা প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতা।”

“যে সমস্ত লোক সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, আমরা তাদের জন্যে দু’আ করি, আল্লাহ তা’আলা যেন তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করেন, যাতে তাঁরা জায়েযের ফাতওয়া প্রদান করা থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। এমন না হোক যে, ফাতওয়া জনসাধারণের পথভ্রষ্টতার কারণ হয়।”

তথ্যসূত্র – পৃষ্ঠা ১১-১৩, “মাকালাতে চাটগামী” – মুফতীয়ে আযম বাংলাদেশ আল্লামা আব্দুস সালাম চাটগামী দা.বা। সাবেক প্রধান মুফতী- বানূরী টাউন করাচী, পাকিস্তান। সিনিয়র মুফতি ও মুহাদ্দিস- দারুল উলুম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

হুজুর হাটহাজারী মাদ্রাসাতে থাকাকালীন প্রতিবছর ইসলামি ব্যাংক ক্যালন্ডার পাঠাতো। তিনি যার মাধ্যমে আসতো তাকে ফেরত দিয়ে দিতেন, লোকটা অনুপস্থিতে দিয়ে গেলে তা ছিঁড়ে ফেলতেন। তিনি বলেন “কিয়মাতের দিন অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ইসলামি ব্যাংককে প্রথম সারিতে শাস্তি ভোগ করতে হবে,  অন্যান্য ব্যাংকগুলো সুদ জেনে বুঝে খাচ্ছে,+ লোকজনও সুদ জেনে বুঝে লেনদেন করে। আর এরা সুদকে সুদ না বলে মোনাফা, ইন্টারেস্ট বলে ধোঁকা দেন, ইসলামি লেভেল লাগায়। তাহলে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এরা অপরাধী বেশি না?” তিনি আরও বলেছিলেন বলেছিলেন, “আমি যতদিন জীবিত আছি, বাংলাদেশের কোনো মাদরাসায় ব্যাংক ঢুকবে না ইনশাআল্লাহ। আমার ইন্তেকালের পরে হয়তো দেখবা মাদরাসার ভেতরেই ব্যাংক ঢুকে পড়বে।”

(সূত্র – হুজুরের ছেলের লিখিত সাক্ষ্য) 

4

যাকে ইসলামি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার বলা হয় সেই মুফতি তাকি ওসমানী সাহেব নিজে শ্রেণীকক্ষে বলেন ইসলামি ব্যাংক ব্যার্থ।

5

জামিয়াতুল ইসলামিয়া আল্লামা বিননূরী টাউন সহ পুরো দেশের অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম সম্মিলিতভাবে ফতোয়া প্রকাশ করেছেন।

প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নাজায়েজ হওয়ার মৌলিক কারণ দুটি;

(১) প্রচলিত ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বৈধতার জন্য শর্তসাপেক্ষে যেসব মূলনীতি গৃহীত হয়েছিল, নাম সর্বস্ব ইসলামী ব্যাংকগুলো সেসব মূলনীতির আলোকে পরিচালিত হচ্ছে না। যে কারণে সুদী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকের মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য বাকি থাকেনি।

(২) দ্বিতীয় মৌলিক কারণ হল, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বৈধ করার জন্য যেসব মূলনীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেগুলো খুবই জরাগ্রস্থ। কেননা সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ফিকহি পরিভাষায় কাটছাঁট করা, দুর্বল এবং প্রত্যাখ্যাত মতের উপর ভরসা করা এবং অপ্রয়োজনে অন্য মাযহাবে অনুপ্রবেশ কে বৈধ মনে করা হয়েছে। এছাড়াও তালফিক তো আছেই।

এছাড়াও আরো কিছু কারণে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম মুসলিমদের জন্য সুদী ব্যাংকিং এর বিপরীতে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং-কে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। এসব কারণে অভিজ্ঞ মুফতি সাহেবগণ প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নাজায়েজ হওয়া এবং তা থেকে পরিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকার ফতোয়া দিয়ে থাকেন।

দারুল ইফতা, জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া বানুরী টাউন

ফাতওয়া নম্বরঃ 143908201051

তারিখঃ ১৭-০৫-২০১৮

মুফতি আহমাদ মুমতাজ সাহেবের ‘গায়রে সুদী বাংকারীঃ এক মুন্সিফানা ইলমী জাঈযা’ বইতে

 

শেয়ার করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *