একজন বিজ্ঞানী খাদ্যে ভেজাল বের করলে কী তাকে আমরা বলি, “পারলে ভেজাল বিহীন খাদ্য উৎপাদন করুন? নয়তো চুপ করুন?”
কিন্তু আমি যখন বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফাঁকি বের করে দেই অনেকে এই প্রশ্নই করে।
প্রশ্নটা তো তাদেরকে করা উচিত ছিল যারা খাবারে ভেজাল মেশাচ্ছে। সে যাই হোক, এখন সমাধান বাতলে দিচ্ছি।
১ সুদের সমাধান কী?
– সুদের সমাধান হচ্ছে ব্যবসা বিনিয়োগ, সাদাকা, যাকাত এবং ক্ষুদ্র পর্যায়ে কর্জে হাসানা।
২ ইসলামি রাষ্ট্র ছাড়া সত্যিকারের ইসলামি ব্যাংক বানানো সম্ভব কিনা।
উত্তর শুনলে অবাক হবেন যে সম্ভব। এর জন্য প্রথমত আপনাকে ব্যবসা বাহানা না করে বরং ব্যবসা বিনিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ, লাভ ও লোকসানের অংশীদার হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনাকে ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেম পরিত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশের বা কোন দেশের আইনে এগুলো অবৈধ না। অর্থাৎ, কেউ জোর পূর্বক আপনাকে বাহানা করতে বলে না এবং ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ করতে কেউ চাপ প্রয়োগ করে না।
বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য মুসলিম ও অমুসলিম দেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে যারা মানুষের থেকে টাকা নিয়ে এক্সপার্টদের দিয়ে সম্মিলিত ভাবে বিনিয়োগ করাচ্ছে। আমার থিসিস ছিল এই ফান্ডগুলো নিয়ে। আমার আগের চাকরিও ছিল এই সেক্টরে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ফান্ডগুলো সবচেয়ে বেশি আছে আমেরিকায়। এদেরকে বলে ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। সাধারণত ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তিন ধরণের হয়। যারা কেবল বড় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে তাদেরকে বলে মিউচুয়াল ফান্ড, যারা মাঝারি কোম্পানিতে সরাসরি অংশীদার হয়ে বিনিয়োগ করে তাদের বলে প্রাইভেট ইকুইটি ফান্ড, আর যারা স্টার্ট আপে বিনিয়োগ করে তাদের বলে ভেঞ্জার ক্যাপিটাল ফান্ড।
আমেরিকার ব্যবসা উন্নয়নের পিছে এই ফান্ডগুলো মূল কারিগর হিসেবে অবদান রেখেছে। আপনি গত ত্রিশ বছরে আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত কোম্পানি গুলোর (টেসলা, মেটা, গুগল সহ অনেকের) উত্থানের ইতিহাস দেখলে লক্ষ্য করবেন তাদের মূল শক্তি ছিল বিনিয়োগ, সুদ না। আর এই বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে ফান্ড গুলো থেকে যা মূলত প্রকৃত ইসলামের মডেল। কিন্তু বর্তমানে যেই বাহানা চলছে সেইটা হচ্ছে সুদকে হালাল করার অপচেষ্টা।
অনেকে জানতে চান ক্ষুদ্র পর্যায়ে কীভাবে হালাল ব্যবসা করবেন। যুগ যুগ ধরে যেভাবে করেছে, আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত যেই হালাল সিস্টেম চালু আছে ও ছিল সেই সিস্টেমে করবেন। যার যার বিনিয়োগ অনুযায়ী তার তার লাভ এবং কাজ অনুযায়ী বেতন। শেষ।
বর্তমান মুদ্রা সুদের দলিল এই কথা সত্য, কিন্তু ইসলামি ব্যাংক নিয়ে মূল ইস্যু কাগজের মুদ্রা না। অভিযোগ হচ্ছে সুদ নিয়ে। সেজন্যই কেউ সোনার বাক্স হাতে নিয়েও যদি বলে মনে কর – আমি একজন ব্যবসায়ী। এখন তোমার যা লাগবে তা আমি দ্বিগুণ দামে বাকিতে বিক্রি করে (যদিও আমি ব্যবসায়ী না) মোট সোনা দ্বিগুণ করে নিব। এইটা ১০০% বাহানা। সুদের যত ক্ষতিকর প্রভাব (শ্রেণী বৈষম্য, সম্পদ পুঞ্জিভূত করণ, অলস ভাবে বসে পুঁজি বৃদ্ধি) সব এতে বর্তমান আছে। সাথে একটা নাটক যুক্ত হলো কেবল।
ইসলামি রাষ্ট্রে এই ব্যবস্থা নিষিদ্ধ হবে। পরিশুদ্ধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ, ইসলামি রাষ্ট্র এমন কোন ম্যাজিক না যা অর্থনৈতিকভাবে সুদকে ব্যবসা বানিয়ে দিবে। বিপরীতক্রমে আমরা যদি অর্থনৈতিকভাবে ব্যবসা করি তা সব যুগে ও সব কালে হালাল থাকবে। এর জন্য কাউকে দোষারভ করতে হবে না এবং বর্তমানেও ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তৈরি করা নিষিদ্ধ না। ইসলাম সহজ এবং আল্লাহ আমাদের জন্য সাধ্যের অতীত বোঝা দেন নাই। তাই ঘুরিয়ে সুদ খাওয়ার চেষ্টা না করে আসুন হালালটাই খাওয়ার চেষ্টা করি।
সবমিলিয়ে, একচুয়াল ইসলামী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরির যে আগ্রহ ও অগ্রসর, আমরা তার থেকে যোজন যোজন দূরে…
এজন্য আমাদের পলায়নপর ও অজুহাতপ্রবণ মানসিকতা ভয়ানকভাবে দায়ী। সাথে রয়েছে জাতিগতভাবে ইসলামি অর্থনীতি সম্পর্কে প্রচন্ড কম জানা, কম পড়া, কম ফিকির করা, কম আলোচনা করা, সুদের বিপক্ষে কম কথা বলা ও সুদ কম বোঝার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।